রঞ্জন মজুমদার শিবু : সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, বিএনপির হাওয়া ভবন, দুর্নীতি ও লুটপাটের বিরুদ্ধে খেলা হবে দাবি করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি বলেছেন, ডিসেম্বর মাস বিজয়ের মাস, মহান মুক্তিযুদ্ধের মাস। এ মাসেই জেলা, মহানগর, থানা থেকে শুরু করে পাড়া মহল্লা ও রাজপথ দখলে থাকবে আওয়ামীলীগের। সেই লক্ষে সকলকে প্রস্তুতি নিতে হবে। তিনি আরো বলেন, বিএনপি সমাবেশের নামে যদি কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে তাহলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জনগণকে সাথে নিয়ে সমুচিত জবাব দিবে। আপনারা সমাবেশ করবেন সুশৃঙ্খলভাবে, মারামারি নয়। তবে আমাদের উপর আক্রমণ হলে আমরাও পাল্টা আক্রমণ করব কি-না সেটা সময় বলে দেবে।
শনিবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে ময়মনসিংহে ঐতিহাসিক সার্কিট হাউজ ময়দানে ময়মসনসিংহ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জিয়াউর রহমানই ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাযজ্ঞের মাস্টারমাইন্ড বলে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ২১ আগস্টে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা ও আইভি রহমানসহ ২৩ জনের প্রাণহানির ঘটনার প্রধান নায়ক হলেন তারেক রহমান। টেমস নদীর পাড় লন্ডন থেকে সাজাপ্রাপ্ত তারেক রহমান হুংকার দিচ্ছেন রাজপথ দখলের। তারেক রহমানের সাথে তালমিলিয়ে বাংলাদেশের রহস্য পুরুষ ডঃ কামাল একই কথা বলছেন। সেই নির্দেশে ডিসেম্বরে নয়াপল্টনে রাজপথ দখলে রাখার নামে বিশৃঙ্খলার কৌশল করছে বিএনপি। মীর্জা ফখরুল ইসলামকে উদ্দেশ্য করে ওবায়দুল কাদের আরো বলেন, ১০ তারিখের অনেক আগেই পল্টনে তাঁবু টানাচ্ছে, হান্ডি-পাতিল, কয়েল, মসারি, কম্বলসহ নানা সম্বল নিয়ে আস্তানা করছেন। কোথায় পাচ্ছে এই টাকা। তাদের এই অর্থের উৎস খোঁজা হচ্ছে। তিনি বলেন, কোথা থেকে টাকা আসছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। হুংকার ছুড়ে সরকারের পতন ঘটানো যাবে না। ওবায়দুল কাদের আরো বলেন, সজীব ওয়াজেদ জয়ের নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ ডিজিটাল হয়েছে। আগামীতে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা হবে। সেই পরিকল্পনা নিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা এগিয়ে চলছে দাবি করে ওবায়দুল কাদের এমপি বলেন, ময়মনসিংহ আজ মিছিলের নগরী, বঙ্গবন্ধুর সৈনিকদের নগরী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নগরীতে পরিণত হয়েছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট জহিরুল হক খোকার সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল ও মহানগর সাধারণ সম্পাদক মোহিত উর রহমান শান্তর সঞ্চালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের আরো বলেন, দলে ত্যাগী নেতাদের ঠাই এবং বয়স্কদের মুল্যায়ন করতে হবে। বসন্তের কোকিলদেরও চিহ্নিত করতে হবে।
সভাপতি মন্ডলীর সদস্য ও কৃষি মন্ত্রী ডঃ মোঃ আব্দুর রাজ্জাক এমপি বলেন, সকল লড়াই সংগ্রামে ময়মনসিংহের ঐতিহাসিক ভুমিকা রয়েছে। ময়মনসিংহ থেকে যখনই বেশি আসন পেয়েছে তখনই আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এসেছে। তাই এই জেলার সম্মেলন অনেক গুরুত্ব বহন করে। আগামী নির্বাচনের আগে দলকে আরো শক্তিশালী ও সুসংগঠিত করে আবারো শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় আনতে হবে। তিনি আরো বলেন, অর্থনীতি ও সামাজিকসহ সকলক্ষেত্রে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। উন্নয়নের ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা পৃথিবীতে আজ নন্দিত। অদম্য বাংলাদেশ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে একটি মর্যাদাশীল স্থানে নিয়ে যেতে শেখ হাসিনা কাজ করছেন।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষা মন্ত্রী ডঃ দীপু মনি এমপি বলেন, আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা, গণতন্ত্র এবং উন্নয়ন দিয়েছে। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আগামীতেও আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনতে সকলকে ঐক্য বদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
এছাড়া সম্মেলনে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহামদ হোসেন, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সাংস্কৃতিক সম্পাদক বাবু অসীম কুমার উকিল, কেন্দ্রীয় সদস্য মারুফা আক্তার পপি, উপাধ্যক্ষ রেমন্ড আরেং, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ এমপি, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে.এম. খালিদ, এডভোকেট মোঃ মোসলেম উদ্দিন এমপি, বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন আহমেদ এমপি, ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল এমপি, মিঃ জুয়েল আরেং এমপি, মনিরা সুলতানা মনি এমপি, সিটি মেয়র মোঃ ইকরামুল হক টিটু বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম। দীর্ঘ ছয় বছর পর ময়মনসিংহ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সার্কিট হাউজ ময়দান সহ সারা নগরীকে সাজানো হয় ভিন্ন আঙ্গিকে। নগর ছেয়ে গেছে রঙবেরঙের ব্যানার, ফেস্টুন আর পোস্টারে। নগরীর প্রতিটি রাস্তাসহ ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ময়মনসিংহ সীমান্ত ভালুকা পর্যন্ত শত শত গেইট, তোরণ দিয়ে সাজিয়ে জানানো হয়েছে অভ্যর্থনা। সম্মেলনকে সফল করতে জেলার ১৩ টি উপজেলা থেকে শত শত বাস, ট্রাক, মিনিবাস, পালকি, বড়বিলা, সিএনজিযোগে হাজার হাজার নেতাকর্মী, কাউন্সিলর, ডেলিগেটর যোগদান করে। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে আইন শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং সম্মেলনের আগে পরে সকল ধরনের নাশকতা রোধে কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের কৌশলী ওসি শাহ কামাল আকন্দের নেতৃত্বে থানা, ডিবি পুলিশ কঠোর নজরদারি ও নিরাপত্তার উদ্যোগ নেয়। এছাড়া র্যাব সহ সাদা পোষাকধারী পুলিশ সদস্যরা সারা নগরীতে নজরদারী চালায়। জেলা পুলিশ এ সব নিরাপত্তা তদারকি করেন বলে কোতোয়ালি পুলিশ জানায়।
আপনার মতামত লিখুন :