নান্দাইল প্রতিনিধি : ময়মনসিংহের নান্দাইলে সকালের কুয়াশামাখা কনকন শীতকে উপেক্ষা করে ভোর সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি বোরো চাষের জমি প্রস্তুত ও চারা রোপণ কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও পৌর সভা এলাকার কৃষকরা। বোরো চাষে আগামীর স্বপ্ন বুনছেন তারা। পরিবার-পরিজন নিয়ে একটু সুখে থাকবেন এটিই তাদের চাওয়া। বোরো চাষে জমির আইল কোদাল দিয়ে সমান করা, সেচের জন্য ড্রেন নির্মাণ,পানি সেচ, হালচাষ, সার প্রয়োগ, বীজ উঠানো ও প্রস্তুতকৃত জমিতে চারা রোপণ করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে কৃষকরা। বর্তমানে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে ধানের কচি চারার সবুজ গালিচা, কোথাও কোথাও গভীর নলকূপ থেকে চলছে পানিসেচ। ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি চাষের কাজ। মই দিয়ে চলছে মাঠ সমান করার কাজ। আনুষাঙ্গিক কাজ শেষ করে কেউ বা বীজতলা থেকে চারা তুলে তা রোপণ করছেন ক্ষেতে। আমন ধানের ভালো ফলন এবং ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকদের বোরো আবাদে এবার আগ্রহ বেড়েছে। সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি এলাকায় ইরি-বোরো ধানের চারা রোপনের কাজ শুরু হয়েছে পুরোদমে। কৃষকদের যেন দম ফেলার সময় নেই। নাওয়া-খাওয়া নেই তাদের ঠিকমত। কৃষকদের মধ্যে কেউ বীজ তলা থেকে চারা তুলছেন, কেউ চারা রোপণ করছেন, আবার কেউ জমিতে হালচাষ করছেন। কৃষকরা জানান, সঠিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলে চলতি মৌসুমেও ইরি-বোরোতে বাম্পার ফলনের আশা করছেন তারা। নান্দাইল উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানাযায়, চলতি বছর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও ১ পৌর সভায় ২২ হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর ২১ হাজার ৯০৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছি। বোরো চাষাবাদের জন্য হাইব্রিড ২২৮০ হেক্টর, উফশি ১৯৯০০ হেক্টর, স্থানীয় ২০ হেক্টর জমিতে রোপনের জন্য বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ১৮ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান রোপণ অর্জিত হয়েছে। বোরো আবাদে শ্রমিক সংকট দেখা দেয়ায় মজুরিও বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষককে ১ কাঠা (১০ শতক) জমি লাগাতে শ্রমিককে ৫০০ টাকা মজুরি দিতে হচ্ছে। নাখেরাজ গ্রামের কৃষক মঞ্জুরুল হক মঞ্জু, খোকন, ধরগাঁও গ্রামের সাদ্দাম হোসেন, বিল্লাল, আতাউর রহমান, শাহজাহান মিয়া বলেন, পুরোদমে জমিতে বোরো ধান লাগাইতাছি। বোরো ধান লাগাইতে দিন-রাত পরিশ্রম করন লাগে। পৌরসভার কাঠলিপাড়া গ্রামের কৃষক মানিক মিয়া, সুরুজ আলী ফকির, প্রিন্স মন্ডল বলেন, আমরা বোরো ধান লাগানো শুরু করছি। এবছর জমিতে পানি দিতে হচ্ছে কাঠা (১০শতাংশ) প্রতি ৬/৭শত টাকা। যেখানে অন্যান্য বছর কাটা প্রতি ৫শত টাকা করে লাগতো। এছাড়াও কাজের লোকের অভাবে নিজেরাই ধান লাগাইতাছি। এদিকে কৃষকরা যেনো সঠিকভাবে বোরো চাষ ও পরিচর্যা করতে পারে সেজন্য উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে গিয়ে কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ দিচ্ছেন। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার টিটুন বিশ্বাস এবং নাদিয়া ফেরদৌসি বলেন, নান্দাইল সবসময় খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। আমরা আশা করি এইবারও বোরোর বাম্পার ফলন হবে। তাতে নান্দাইলের চাহিদা মিটিয়ে বাহিরে রপ্তানি হবে। উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আমিনুল হক বলেন, এবার ২২ হাজার ৩৮০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মুহাম্মদ আনিসুজ্জামান বলেন, নান্দাইল কৃষি সমৃদ্ধ এলাকা। ইরি-বোরো ধানের বাম্পার ফলন ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে আমরা মাঠ পর্যায়ে কাজ করছি এবং কৃষকদেরকে আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি সহ সকল প্রকার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে আবহাওয়া ও পরিবেশ অনুকূলে থাকলে এবছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন হবে।’
আপনার মতামত লিখুন :