রঞ্জন মজুমদার শিবু ঃ গতকাল মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) সকালে দেবীর পায়ে পপুস্পাঞ্জলী, পূজা সমাপন, দর্পণ বিসর্জন, প্রতিমা নিরঞ্জন ও শান্তিজল গ্রহণের মধ্য দিয়ে ময়মনসিংহে সনাতধর্মালম্বীদের ৫দিন ব্যাপী শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাবিজয়া দশমী সমাপন ।
এদিন সকাল সাড়ে ৬টায় রামকৃষ্ণ আশ্রম ও মিশনে মহাবিজয়া দশমী (বিহিত) পূজা এবং পূজা সমাপন ও দর্পণ বিসর্জন অনুষ্ঠিত হয়। বিকেলে অনুষ্ঠিত হয় প্রতিমা নিরঞ্জন ও শান্তিজল গ্রহণ। এদিন সকালে মহাবিজয়া দশমীতে রেঞ্জ ডিআইজি (অতিরিক্ত আইজিপি পদোন্নতিপ্রাপ্ত) দেবদাস ভট্টাচার্য্য ও রেঞ্জ ডিআইজির সহধর্মীনি মধু ছন্দা ভট্টাচার্য্য সহ পূজারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। পূজায় পুরোহিত ছিলেন শ্রী সমর রঞ্জন চক্রবর্তী । অঞ্জলী মন্ত্র পাঠ করান রামকৃষ্ণ মিশন ও আশ্রমের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ স্বামী সন্ততানন্দ মহারাজ।
বিজয়া দশমী উপলক্ষে গতকাল বিকেলে ময়মনসিংহ আর্যধর্ম জ্ঞান প্রদায়িনী সভা (ধর্মসভা) দূর্গাবাড়ী মন্দির কমিটির আয়োজনে মন্দির প্রাঙ্গন থেকে এক বিজয়ার শুভাযাত্রা শুরু হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে কাচারীঘাটস্থ ব্্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে গিয়ে উপস্থিত হন। একই ভাবে পূজা উদ্যাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দ নগরীর অন্যান্য মন্দির কমিটির নেতৃবৃন্দ ও ভক্তবৃন্দদের সাথে নিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে উপস্থিত হন এবং একে একে প্রতিমা বিসর্জন দেন। এদিকে কাচারীঘাটস্থ ব্্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে বির্সজন ঘাটে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের আয়োজনে প্রতিমা বির্সজনে আসা পুজারী ভক্তবৃন্দদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোঃ ইকরামুল হক টিটু। এসময় বিশর্জন ঘাটে উপস্থিত ছিলেন সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইউসুফ আলী, জেলা প্রশাসক মোঃ মোস্তাফিজার রহমান, পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোঃ মেহেদী হাসান, মসিক সচীব আরিফুর রহমান, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, প্যানেল মেয়র-৩ সামিমা আক্তার, প্রধান প্রকৌশলী বিদ্যৎ জিল্লুর রহমান, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোঃ জহুরুল হক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল শাহিনুল ইসলাম ফকির, স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন কর্মকর্তা দীপক মুজুমদার, কোতোয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ শাহ কামাল আকন্দ, শীতল সরকার, হামিদা পারভীন, জনসংযোগ কর্মকর্তা শেখ মহাবুল হোসেন রাজিব, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ জেলা শাখার সভাপতি এডভোকেট বিকাশ রায়, মহানগর সাধারণ সম্পাদক পবীত্র রঞ্জন রায়, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি এডভোকেট রাখাল চন্দ্র সরকার, মহানগর সভাপতি এডভোকেট তপন দে, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ মহানগর শাখার সভাপতি এডভোকেট প্রশান্ত কুমার দাস চন্দন, কাউন্সিলর তাজুল আলম, শিরিন আক্তার, সাধারণ সম্পাদক উত্তম চক্রবর্তী রকেট, স্বেচ্ছা সেবকলীগ সাবেক সভাপতি এডভোকেট এ বি এম নুরুজ্জামান খোকন সহ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর, কর্মকর্তা, কর্মচারী জেলা উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, পূজা উদ্যাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দ সহ বিভিন্ন পূজামন্ডপের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও বিপুল সংখ্যাক ভক্ত, দর্শনার্থী ও সর্বস্তরের মানুষ উপস্থিত ছিলেন। সঞ্চালনায় ছিলেন কাউন্সিলর ফারুক হাসান।
প্রতিমা নিরঞ্জনকালে ঘাটে ও রাস্তায় সার্বিক আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র্যাব, ফায়ার সার্ভিস টিম ও স্বেচ্ছা সেবক নিয়োজিত ছিলেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এ অঞ্চলে কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। গত সোমবার (২৩ অক্টোবর) ছিল মহা-নবমী। মন্ডপে মন্ডপে ভক্ত ও দর্শনার্থীদের ছিল উপচেপড়া ঢল। মহা-নবমী পূজা শেষে মন্ডপে মন্ডপে অঞ্জলী প্রদান, চন্ডীগ্রন্থ পাঠ, প্রার্থনা ও প্রসাদ বিতরণ করা হয়।
উল্লেখ্য গত শুক্রবার ষষ্ঠী পূজা, দেবীর বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হয় হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। অসুরের বিনাশ আর শান্তি কল্যাণ ও সমৃদ্ধি লাভের আশায় যুগযুগ ধরে মা দুর্গার আরাধনা করে আসছে হিন্দু সম্প্রদায়। বিজয়া দশমীতে ময়মনসিংহ মহানগরী ও এর আশপাশের এলাকায় ব্্রহ্মপুত্র নদে ও পারিবারিক জলাশয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা দেবীদুর্গাকে বিসর্জন দেয়।
আপনার মতামত লিখুন :