স্টাফ রিপোর্টার : কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এমপি বলেছেন, জমি হ্রাস, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে ভবিষ্যতে কৃষি উৎপাদন ও খাদ্য নিরাপত্তাকে টেকসই করতে হলে জলবায়ুসহনশীল ও উচ্চ ফলনশীল ফসলের জাত ও আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি উদ্ভাবন করে কৃষকদের মাঝে তা দ্রুত ছড়িয়ে দিতে হবে। একইসঙ্গে কৃষিতে রোবোটিক্স, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, ইন্টারনেট অব থিংস, ড্রোন প্রভৃতির ব্যবহার এবং প্রিসিসন ও ভার্টিকাল এগ্রিকালচারে দক্ষতা বাড়াতে হবে। দেশের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের গ্রাজুয়েটদেরকে এসব বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করে নিজেদেরকে প্রস্তুত করতে হবে।
রবিবার (১২ ফেব্রুয়ারী) সকালে ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অষ্টম সমাবর্তনে সভাপতির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
মহামান্য রাষ্ট্রপতি এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মো. আবদুল হামিদের অনুশাসনে কৃষিমন্ত্রী এই সমাবর্তনে সভাপতিত্ব করেন ও ডিগ্রি প্রদান করেন। অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. লুৎফুল হাসান।
মন্ত্রী আরো বলেন, দিল্লীর মুঘল, ইংরেজ শাসন থেকে শুরু করে সর্বশেষ পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর আমলেও বাংলার কৃষক ছিল অন্তহীন শোষণ ও বঞ্চনার শিকার এবং নিপীড়িত ও অবহেলিত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৈশোর-তরুণ বয়স থেকেই বাংলার কৃষকের দৈন্যদশা স্বচক্ষে দেখেছেন, যা তাঁর কোমল হৃদয়ে গভীরভাবে রেখাপাত করে। তাই আমরা দেখি, বঙ্গবন্ধুর সারা রাজনৈতিক জীবনজুড়ে কৃষক ও কৃষির উন্নয়ন ও কল্যাণ ভাবনা নিবিড়ভাবে কাজ করেছে। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “আমাদের সমাজে চাষিরা হলো সবচেয়ে দুঃখী ও নির্যাতিত শ্রেণী, এবং তাদের অবস্থার উন্নতির জন্য আমাদের উদ্যোগের বিরাট অংশ অবশ্যই তাদের পিছনে নিয়োজিত করতে হবে। স্বাধীনতার পরপরই বঙ্গবন্ধু কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সবুজ বিপ্লবের ডাক দেন। উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ভর্তুকি দিয়ে সার, সেচ, বীজসহ কৃষি উপকরণের প্রাপ্তি সহজতর করেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১৩ই জানুয়ারি মন্ত্রিপরিষদের প্রথম বৈঠকেই তিনি চাষিদের সমস্ত বকেয়া খাজনার সুদ মওকুফ করে দেন। ২৫ বিঘা পর্যন্ত খাজনাও মওকুফ করার ঘোষণা দেন। জমির মালিকানার সর্বোচ্চ সিলিং ১০০ বিঘা নির্ধারণ করেন। পাকিস্তানি শাসন আমলে রুজু করা ১০ লক্ষ সার্টিফিকেট মামলা থেকে কৃষকদের মুক্তি দেন এবং তাদের সকল বকেয়া ঋণ সুদসহ মওকুফ করে দেয়া হয়।
মন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা কৃষি বিপ্লবের যে ধারা সূচনা করেছিলেন, সেই ধারাবাহিকতায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী, দেশরতœ শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগ সরকার কৃষিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। ফলে কৃষিক্ষেত্রে ও খাদ্য নিরাপত্তায় বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। ১৯৭০-৭১ সালে যেখানে মোট খাদ্যশস্য উৎপাদন ছিল প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ মেট্রিক টন সেখানে ২০২১-২২ অর্থবছরে তা বেড়ে ৪ কোটি ৭২ লক্ষ ৮৮ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। আগামীতে টেকসই ও জলবায়ুসহনশীল কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে কৃষি গ্র্যাজুয়েটদের প্রস্তুত করতে দেশের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের মূল ভূমিকা পালন করতে হবে। সেজন্য, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের কারিকুলামকেও উন্নত ও আধুনিক করতে হবে। নবীন কৃষিবিদদের সেভাবে যোগ্য করে গড়ে তুলতে শিক্ষকমন্ডলীদের এগিয়ে আসতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের কৃষি ও কৃষকবান্ধবনীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে চাল,গম,ভুট্টা, ফলমূল, শাকসবজি, মাছ, মাংস, দুধ, ডিম উৎপাদনে অভাবনীয় সাফল্য অর্জিত হয়েছে৷ এখন অনেক ফসল উৎপাদনে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ উৎপাদনকারী দেশের তালিকায় এক থেকে দশের মধ্যে আছে। তিনি জানান, বিগত ২০২১-২২ অর্থবছরে চালের উৎপাদন ৪ কোটি ৪ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে, যা সর্বকালের রেকর্ড অতিক্রম করেছে। বিগত ১৪ বছরে চালের উৎপাদন ২৯%, গম ৩৭%, ভুট্টা ৬৭১%, আলু ১১০%, ডাল ৩২৮%, সবজি ৬৪৫%, পেঁয়াজ ৩৯৫% বৃদ্ধি পেয়েছে। ড. রাজ্জাক বলেন, কৃষিখাতে আজ যে অভাবনীয় সাফল্য দৃশ্যমান, এর পেছনে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন দেশের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের গ্র্যাজুয়েটবৃন্দ।
মন্ত্রী বলেন, কৃষি উৎপাদনে অর্জিত বিস্ময়কর সাফল্যের ফলেই দেশের মানুষ এখন পেট ভরে খেতে পায়। করোনা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ শত দুর্যোগের মাঝেও কেউ না খেয়ে থাকে না। বিগত ১৪ বছরে কোন খাদ্য সংকট হয় নি। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে এসে আমরা দেখতে পাই এই স্বাধীন দেশটির যতকিছু সাফল্য-অর্জন সবই এসেছে বঙ্গবন্ধ ুকন্যা দেশরতœ শেখ হাসিনার দুরদর্শিতা ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে। বাংলাদেশ আজ সর্বক্ষেত্রে বিশ্বে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। রাজনীতি, অর্থনীতি, সামাজিক, সংস্কৃতিসহ সকল ক্ষেত্রে বাংলাদেশ তাঁর সক্ষমতা দেখিয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশকে মর্যাদা ও সন্মানে বিশ্বপরিমন্ডলে এক অনন্য উচ্চতায় তুলে ধরেছেন। তাঁর নেতৃত্বেই আমরা গড়ে তুলবো বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সমৃদ্ধ ও শান্তির সোনার বাংলা।
এর আগে কৃষিমন্ত্রী সমাবর্তন শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন এবং সমাবর্তনের উদ্বোধন করেন। সমাবর্তনে জুলাই ২০১৪ থেকে ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি সম্পন্নকারী ছয় হাজারের বেশি শিক্ষার্থীকে ডিগ্রি প্রদান করা হয়। এদের মধ্যে ২২৪ জনকে স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়।
আপনার মতামত লিখুন :