বাংলাদেশের রাজনীতিতে বর্হিবিশ্বের যে হস্তক্ষেপ তা জাতির জন্য লজ্যা জনক- এডভোকেট রানা দাসগুপ্ত


swadeshsangbad প্রকাশের সময় : জুন ১৬, ২০২৩, ৩:০৫ অপরাহ্ন / ১০৭
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বর্হিবিশ্বের যে হস্তক্ষেপ তা জাতির জন্য লজ্যা জনক- এডভোকেট রানা দাসগুপ্ত

স্টাফ রিপোর্টার : “ধর্মীয় রাষ্ট্র নয় ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র চাই : ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার” এই শ্লোগানে সরকারি দলের ২০১৮ সালে নির্বাচন পূর্ব ৭ দফা প্রতিশ্রুতি দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে ঐক্য পরিষদের ময়মনসিংহ বিভাগীয় প্রতিনিধি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (১৬ জুন) সকাল ১১ টায় স্থানীয় জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ময়মনসিংহ বিভাগের আয়োজনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রিয় সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রানা দাসগুপ্ত। তিনি বলেন, স্বাভাবিক নিয়মে আগামী ডিসেম্বর মাসের শেষ দিকে বা জানুয়ারী মাসের প্রথম দিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার কথা রয়েছে। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে খেলা হচ্ছে বাংলাদেশে ও আন্তর্জাতিক পরিসরে। আজকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বর্হিবিশ্বের যে হস্তক্ষেপ এতে ঐক্য পরিষদ মনে করে এই হস্তক্ষেপ জাতির জন্য লজ্যা জনক। তিনি আরো বলেন, দেশ স্বাধীন হয়েছে ৫২ বছর প্রকৃত গণতন্ত্র আজো বাংলার মানুষ খুজে পেলো না। এই যে গণতন্ত্রের দুর্বলতম পরিস্থিতি এই পরিস্থিতিকে সামনে রেখে আন্তর্জাতিক মহল বাংলাদেশের মানুষকে দুই ভাগে ভাগ রেখে তারা তাদের আন্তর্জাতিক রাজনীতির আদিপত্যবাদের খেলা খেলতে শুরু করেছে। এখানেই বাংলাদেশের গণতন্ত্রের সংকট। আমাদের কাছে মনে হচ্ছে আগামী সাত মাসের মধ্যে নির্বাচনকে সামনে রেখে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির পায়তারা জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ভাবে চলছে। আমরা লক্ষ করেছি যে কোন নির্বাচনের পূর্বে সংখ্যালঘুদের উপরে হামলা চালানো হয়। ইতিমধ্যে সংখ্যালঘুরা হতাশ হয়ে পড়েছে। তারা ক্ষুব্ধ হচ্ছে। আর এই পরিস্থিতি যদি অব্যাহত থাকে তাহলে আগামী সংসদ নির্বাচনে আমরা যদি কোন প্যাসেজ না পাই অতীতের ভূমিকা আমাদের পালন করা সম্ভব হবে কিনা এটি আমাদের ভেবে দেখতে হবে। অঙ্গিকার করেছেন আপনি। ২০১৮ সালে বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচনে বুক ফুলিয়ে আপনাকে ভোট দিয়েছে। এখন যদি আপনি অঙ্গিকার বাস্তবায়ন না করেন তাহলে মাইনরটি মানুষ তাদের পায়ের জুতা দিয়ে আমাদের পেটাবে এবং এটাই স্বাভাবিক। অতএব আগামী নির্বাচন একটি দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক ভ’মিকা যাতে আমরা পালন করতে পারি সেই সুযোগ আপনায় আমাদের দিতে হবে। আমাদের দাবি বাস্তবায়ন না করে শুধু লজেন্স খাইয়ে আর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আমাদেরকে আর আটকানো যাবে না। আমরা কারো কাছে মাথা নত করবো না। কোন ভয়ভীতি, হুমকি ও চক্রান্তের কাছে অতীতেও যেমন মাথা নত করি নাই ভবিষ্যতেও করবো না।
রানা দাশগুপ্ত বলেন, ৭২ এর সংবিধান থেকে বাংলাদেশ অনেক দুরে ছিটকে গেছে। বঙ্গবন্ধুর সংবিধান আজ আর নাই। আজকের সরকারি দল বঙ্গবন্ধুর আওয়ামীলীগ নয়। তারাও আজ অনেক দুরে ছিটকে গেছে। তাদের ভাষায় এটি হচ্ছে রাজনীতীর জন্যে, ক্ষমতার জন্যে, ক্ষমতায় থাকার জন্য একটি কৌশল। কৌশলের রাজনীতি হতে পারে কিন্তু অপকৌশল কখনও কৌশলের রাজনীতি হতে পারে না। আমি মুক্তিযুদ্ধ করেছি সেদিন আমার যে স্বপ্ন ছিল একজন কিশোর মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে সে স্বপ্ন আজ খান খান হয়ে গেছে। বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িকতা পাকিস্তানের চেয়েও দশ গুন বেড়ে গেছে। রানা দাশগুপ্ত বলেন, সরকারি দলের একেক নেতা একেক কথা বলছেন। সরকারি দলের মন্ত্রীরা আরেক কথা বলছেন। আমাদের কাছে মনে হয় বিদ্যমান পরিস্থিতি সরকারি দলের মধ্যেই কোথাও হয় সমন্বয়ের অভাব নতুবা যে যেভাবে পারছে সে ভাবেই পরিস্থিতি তুলে ধরার চেষ্টা করছে। এতে জনগণ ক্রমশই বিভ্রান্ত হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, শুধু শেখ হাসিনার সরকারের আমলেই নয় ৭৫ এর পর থেকে যে সরকার গুলো আসছে সবার আমলেই সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠির হার ক্রমশই নীচের দিকে নামছে। স্বাধীনতার ৫২ বছর পরেও কোন রাজনৈতিক দল বা সরকার কখনও তারা মূল্যায়ন করলো না সংখ্যালঘুর হারটা নেমে যাচ্ছে কেন। ভারতেও সাম্প্রদায়িক সমস্যা আছে কিন্তু ভারতের মুসলমানরা তো যাচ্ছে না। কিন্তু বাংলাদেশের হিন্দুরা কোন পরিস্থিতির কারণে তারা দেশ ত্যাগে বাধ্য হচ্ছে। এদশের সংখ্যালঘুদের অবস্থা মূল্য যে দাড়িয়েছে সেটা হলো না ঘরকা না ঘাটকা। তাই অধিকার আদায়ের আন্দোলন অব্যাহত রাখতে হবে। সকলেই সজাগ ও সতর্ক থাকলে ঐক্যবদ্ধ ভাবে সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করা সম্ভব হবে।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ময়মনসিংহ জেলা শাখার সভাপতি এডভোকেট বিকাশ রায় এর সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য শ্রী মিলন কান্তি দত্ত, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট দীপংকর ঘোষ, শিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট তপু গোপাল ঘোষ, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক শ্রী শংকর সাহা প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন মহানগর শাখার সভাপতি এডভোকেট প্রশান্ত কুমার দাস চন্দন। ঐক পরিষদ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা: সুজিত বর্মন ও মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক পবিত্র রঞ্জন রায় এর সঞ্চালনায় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি এডভোকেট রাখাল চন্দ্র সরকার, মহানগর শাখার সভাপতি এডভোকেট তপন দে, সাধারণ সম্পাদক উত্তম চক্রবর্তী রকেট, খ্রিষ্টান প্রতিনিধি অরণ্য ই চিরান, যুব ঐক্য পরিষদের লিটন দাস, মহিলা ঐক্য পরিষদের সভাপতি প্রফেসর ডাঃ শীলা সেন, আকাশ বনিক, শ্রী নয়ন দাস, শেরপুর সভাপতি দেবাশীষ ভট্টাচার্য্য, নেত্রকোণা সাবেক সভাপতি এডভোকেট শিতাংসু, জামালপুর সাধারণ সম্পাদক বাবু রমেশ বনিক প্রমুখ। এসময় ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলার ঐক্য পরিষদের নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।