বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের শান্তিরক্ষা বাহিনীর রয়েছে স্বর্ণোজ্জল ভুমিকা- গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী


swadeshsangbad প্রকাশের সময় : মে ২৯, ২০২৩, ৫:১৭ অপরাহ্ন / ১৪৬
বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের শান্তিরক্ষা বাহিনীর রয়েছে স্বর্ণোজ্জল ভুমিকা- গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী

রঞ্জন মজুমদার শিবু : Òpeace begins with me এই প্রতিপাদ্য নিয়ে ময়মনসিংহে বেলুন উড়িয়ে, বর্ণাঢ্য র‌্যালী ও আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস উদযাপন করা হয়েছে। সোমবার (২৯ মে) রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয় প্রাঙ্গণে বেলুন উড়িয়ে দিবসের উদ্বোধন করেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহম্মেদ এমপি। র‌্যালীটি রেঞ্জ কার্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে টাউন হল প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়। র‌্যালীতে বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তা, ছাত্র ছাত্রী সহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ অংশ গ্রহণ করেন।
পরে এডভোকেট তারেক স্মৃতি অডিটোরিয়ামে রেঞ্জ কার্যালয় আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ এমপি। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ঐতিহ্যগত ভাবেই শান্তি প্রিয়। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশ বিশ্ব শান্তি রক্ষায় আন্তর্জাতিক শান্তি মিশনে কাজ শুরু করে। বাংলাদেশের শান্তিরক্ষা বাহিনী জীবন উৎসর্গ করে এদেশের মুখ শুধু উজ্জলই করেনি, সফল করেছে সকল শান্তি প্রিয় রাষ্ট্রের সম্বিলিত প্রচেষ্টাকে। তিনি আরো বলেন, বাঙালি জাতি শান্তিপ্রিয় জাতি। বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় এ জাতির কৃতি সন্তানদের রয়েছে স্বর্ণোজ্জল ভুমিকা। বিশ্বের বিভিন্ন বিবদমান জাতি গোষ্ঠীর বিবাদ মিমাংসা, সশস্ত্র বিদ্রোহ দমন ও সহিংসতা নিরসনে বাংলার সূর্যসৈনিকেরা কার্যকর ভুমিকা পালন করে আসছে। সা¤্রাজ্যবাদ ও ফ্যাসিবাদের বিরোধিতা এবং মানবতা ও বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালনের স্বীকৃতি স্বরুপ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে জুলিও কুরি শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। বাঙালির অধিকার রক্ষায় আজীবন সংগ্রাম করেছেন জাতির এই কৃতি সন্তান। এজন্য পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচার নির্যাতন, জেল জুলুমের শিকার হয়েছেন তিনি। তবু শান্তির লক্ষ্যে তিনি ছিলেন পর্বতের মত স্থির আর ইস্পাতের মত দৃঢ়। প্রতিমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ আজ তার সুযোগ্য উত্তরসূরী, তার আত্মজা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দুরন্ত দুর্বার গতিতে উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। ১০ লক্ষের বেশী রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দান, পার্বত্য শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর ও বাস্তবায়ন, ভারতের সাথে স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন, মিয়ানমার ও ভারতের সাথে সমুদ্র সীমানা নির্ধারণের মত দূরদর্শী কার্যাবলী তার হাতেই সম্পাদিত হয়েছে যা দক্ষিণ এশিয়ায় দীর্ঘমেয়াদি শান্তি প্রতিষ্ঠায় কার্যকর ভুমিকা পালন করবে। দেশের ভিতরে ও বাইরে গনতন্ত্র ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় তিনি আজীবন সংগ্রাম করে চলেছেন। একারনে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে বারবার হামলা করেছে প্রতিক্রিয়াশীল চক্র। তাতেও দমে যাননি শেখ হাসিনা। নিজের জীবন বাজী রেখে সকল প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে তিনি আপোসহীন কাজ করে চলেছেন মানুষের কল্যানে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আগামীর বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ, বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় আরো সক্রিয় ও কার্যকর ভূমিকা পালনে সক্ষম হবে বাংলাদেশ,এই প্রত্যাশা আমাদের সকলের।
প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, ১৯৮৮ সালে ইরাক-ইরান যুদ্ধ অবসানের পর ইরাকের মাটিতে স্থলমাইন অপসারনের মত ঝুকিপূর্ণ কাজের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী মিশনে কাজ শুরু করে বাংলাদেশ। এরপর জাতিসংঘের বিভিন্ন শান্তিরক্ষা মিশনে সুনামের সাথে কাজ করেছে বাংলাদেশ। বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশের ৫১২ জন সদস্যসহ ৭ হাজার ২৬৯ জন শান্তিরক্ষী বিভিন্ন মিশনে কর্মরত আছেন। অদ্যাবধি বিভিন্ন মিশনে কাজ করতে গিয়ে এদেশের ১৬৬ জন শান্তিরক্ষী নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন, অনেকে আহত হয়েছেন পঙ্গুত্ব বরন করেছেন। আজকের এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমি তাদের প্রতি বিন¤্র শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। তারা তাদের এই অপরিসীম ত্যাগের মাধ্যমে শুধু বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠাই ভুমিকা পালন করেনি, তারা বাঙালি ও বাংলাদেশের জন্য অপরিশীম সম্মান বয়ে এনেছেন। একই সাথে শান্তিরক্ষা মিশনে কাজের সুবাদে বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়েছে যা দেশের সার্বিক উন্নয়নে কার্যকর ভুমিকা পালন করেছে।
অনুষ্ঠানের সভাপতি রেঞ্জ ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য্য বলেছেন জাতিসংঘ সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশের কাজে ̄^ীক…তি দিয়েছে। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশ তাদের পেশাদারিত্ব, নিরপেক্ষতা, ধর্ম-বর্ণ ও নারী-পুরুষের প্রতি সংবেদনশীল ও শ্রদ্ধাশীল থেকে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সফল ও সুনামের সহিত কাজ করছে, যা শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশকে রোল মডেল হিসেবে উপস্থাপন করেছে। তিনি আরো বলেন, সারা বিশে^র ন্যায় বাংলাদেশেও কেন্দ্রিয় ভাবে রাজধানী ঢাকাসহ প্রতিটি বিভাগীয় শহরে সকল শান্তিরক্ষীকে সম্মান প্রদর্শন করার জন্য ২০০৩ সাল হতে এই দিনটি পালিত হয়ে আসছে। ময়মনসিংহ রেঞ্জ পুলিশও যথাযথ সম্মানসহ এই দিনটি উদযাপন করে আসছে। উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ ১৯৮৯ সাল হতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সাফল্যের সাথে অংশ গ্রহণ করে চলেছে। এ পযর্ন্ত বাংলাদেশের ২১,২৮৪ জন পুলিশ সদস্য শান্তিরক্ষী হিসেবে কাজ করেছেন। বর্তমানে ৫১২ জন বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যসহ ৭২৬৯ জন বাংলাদেশী শান্তিরক্ষী বিভিন্ন মিশনে কর্মরত আছেন। বিশে^ শান্তি প্রতিষ্ঠায় গত ৩৪ বছরে বাংলাদেশের ১৬৬ জন শান্তিরক্ষী প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। বাংলাদেশ ২০১০ সাল হতে নারী পুলিশ কন্টিনজেন্ট প্রেরণ করছে। এ যাবৎকাল নারী পুলিশের ১৭৬৬ জন সদস্য শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ গ্রহণ করেছে। বর্তমানে সারা বিশে^ ১৫৭ জন নারী পুলিশ সদস্য শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করছেন।
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোঃ ইকরামুল হক টিটু, বিভাগীয় কমিশনার মোঃ শফিকুর রেজা বিশ্বাস, ময়মনসিংহ সেনাবাহিনীর সদর দপ্তর ৭৭ ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাফিজুর রহমান এনডিসি পিএসসি, জেলা প্রশাসক মোঃ মোস্তাফিজার রহমান, লে: কর্নেল লেলিন হোসেন প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা ।
এছাড়াও রেঞ্জ ডিআইজি’র কার্যালয় অতিরিক্ত ডিআইজি (প্রশাসন ও অর্থ) মোঃ এনামুল কবির, অতিরিক্ত ডিআইজি (ক্রাইম) আবিদা সুলতানা, বিপিএম, পিপিএম, মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান, বিপিএম, অধিনায়ক (অতিরিক্ত ডিআইজি), র‌্যাব-১৪, ময়মনসিংহ, পুলিশ সুপার, নেত্রকোণা, পুলিশ সুপার, জামালপুর, পুলিশ সুপার, শেরপুরসহ  আমন্ত্রিত অতিথিগণ উপস্থিত ছিলেন।