স্টাফ রিপোর্টার : ‘কৃত্য পেশাভিত্তিক মন্ত্রণালয় চাই’ এই শ্লোগানে ক্যাডার কম্পোজিশনের সুরক্ষা, পদোন্নতি, পদসৃজন, স্কেল আপগ্রেডেশন ও আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসনসহ বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের ন্যায্য দাবিসমূহ আদায়ে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকালে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির জেলা শাখার আয়োজনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে এক লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক সরকারী আনন্দ মোহন কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রধান প্রফেসর শাহ মোঃ মঈনুদ্দিন। দেশব্যাপী জেলা উপজেলায় সংগঠনের কেন্দ্রিয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে এই সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য পাঠে প্রফেসর মঈনুদ্দিন বলেন, অবিলম্বে দাবীগুলো পূরন না হলে আগামী ২ অক্টোবর সারা দেশে দিনব্যাপী (একদিনের) পূর্নকর্মবিরতি এবং দারীপূরনে দৃশ্যমান অগ্রগতি না হলে আগামী ১০,১১ ও ১২ অক্টোবর এই তিন দিন লাগাতার সর্বাতœক কর্মকিরতি পালন করা হবে। বক্তব্যে আরো বলা হয়,
বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত সার্বিক শিক্ষা ব্যবস্থা পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য শিক্ষা ক্যাডার সৃষ্টি করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ দিনেও শিক্ষা ক্যাডারকে বিশেষায়িত পেশা হিসেবে গড়ে তোলা হয়নি। বঞ্চনা আর বৈষম্যের মাধ্যমে এ পেশার কার্যক্রমকে সংকুচিত করা হয়েছে। এ পেশাকে গ্রাস করছে অদক্ষ অপেশাদাররা যা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দর্শনের পরিপন্থী। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে যে সকল অভীষ্ট নির্ধারণ করেছে সেগুলো অর্জনে তিনিও শিক্ষাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। তাই জরুরিভাবে প্রয়োজন একটি দক্ষ যুগোপযোগী ও স্বয়ংসম্পূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থাপনা। শিক্ষায় জাতীয় লক্ষ্য অর্জনে জেলা, উপজেলা, অঞ্চলে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট দপ্তর, অধিদপ্তর ও প্রকল্পসমূহ পরিচালনায় শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের নিয়োগ সময়ের দাবি।
ইঈঝ (এবহবৎধষ ঊফঁপধঃরড়হ) ঈড়সঢ়ড়ংরঃরড়হ ধহফ ঈধফৎব ৎঁষবং ১৯৮০ মোতাবেক দেশের প্রাথমিক থেকে উচ্চ শিক্ষা স্তরের শিক্ষা প্রদান, পরিচালনা, ব্যবস্থাপনা, পরিকল্পনা, গবেষণা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পর্যন্ত শিক্ষা ক্যাডারের কার্যপরিধি ব্যাপৃত। প্রাথমিক থেকে উচ্চ শিক্ষা স্তর সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরের নবম গ্রেডের উপরে সকল পদ শিক্ষা ক্যাডারের তফসিলভুক্ত। এসব পদে শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা বাদে অন্য কারও পদায়নের সুযোগ নেই। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা ক্যাডারের তফসিলভুক্ত পদ থেকে শিক্ষা ক্যাডার বহির্ভুতদের অপসারণের দাবী জানিয়েছি কিন্তু সেটি করা হয়নি। উপরন্তু আমরা লিখিতভাবে আপত্তি জানাবার পরেও বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের তফসিলভুক্ত প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ৫১২ টি পদ শিক্ষা ক্যাডারের তফসিল বহির্ভুত করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নিয়োগবিধি চুড়ান্ত করা হয়েছে। এটি সুস্পষ্টতই শিক্ষা ক্যাডারের অস্তিত্বের উপর আঘাত।
শিক্ষা ক্যাডারের ১৬ হাজার কর্মকর্তা বর্তমান সরকারের ভিশন-২০৪১ তথা স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণে একযোগে কাজ করে যাচ্ছেন কিন্তু প্রাপ্য অধিকার ও সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কোন কারণ ছাড়াই পদোন্নতি বন্ধ আছে দুই বছর। এই মূহুর্তে শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তার সংখ্যা ৭ হাজারের বেশি। এর মধ্যে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি যোগ্য ১২০০ জন। সহযোগী অধ্যাপক পদোন্নতি যোগ্য ৩০০০ জন, সহকারি অধ্যাপক পদে পদোন্নতি যোগ্য কর্মকর্তা আছেন প্রায় ৩০০০ জন। এই কর্মকর্তাদের পদোন্নতির জন্য সরকারের কোন অতিরিক্ত অর্থ প্রয়োজন নেই। সবাই পদোন্নতিযোগ্য পদের বেতন স্কেলের সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে গেছেন। ক্যডার সার্ভিসে শূন্য পদ না থাকলে পদোন্নতি দেয়া যাবে না এমন কোন বিধান নেই। অথচ, ক্যাডারকে শূন্য পদের অজুহাতে পদোন্নতি বঞ্চিত রাখা হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসনের নির্দেশ দিয়েছেন বারবার। কিন্তু সে নির্দেশনা মানা হচ্ছে না।
শিক্ষার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে ৪র্থ প্রেডের উপর কোন পদ নেই। অন্য ক্যাডার কর্মকর্তারা পঞ্চম গ্রেড হতে তৃতীয় গ্রেডে পদোন্নতি পান। কিন্তু শিক্ষা কাভারে সর্বোচ্চ পদ অধ্যাপক পদটি চতুর্থ গ্রেড হওয়ার শিক্ষা ক্যাডারের পঞ্চম গ্রেড হতে তৃতীয় গ্রেডে পদোন্নতির সুযোগ নেই। চতুর্থ গ্রেডেই আটকে থাকছেন। অধ্যাপক পদটি তৃতীয় প্রেডে উন্নীত করা এবং আনুপাতিক হারে প্রথম ও ২য় গ্রেডের পদ সৃষ্টি করা জরুরি হয়ে পড়েছে। দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর হলো শিক্ষা। প্রশাসনসহ অন্যান্য সেক্টরের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে অফিস রয়েছে। কিন্তু জেলা ও উপজেলায় শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনের জন্য শক্তিশালী শিক্ষা প্রশাসন গড়ে ওঠেনি। উপজেলায় ও জেলায় মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থাকলেও উচ্চ শিক্ষা দেখভালের জন্য কোন কর্তৃপক্ষ নেই। দেশের সার্বিক শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে শিক্ষা ক্যাডার নিয়ন্ত্রিত জেলা ও উপজেলা শিক্ষা প্রশাসন প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন।
শিক্ষা ক্যাডারের উল্লিখিত দাবিগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই অনেক পুরাতন। আমরা দীর্ঘদিন ধরে সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। কিন্তু শিক্ষা ক্যাডারের দাবিগুলো পূরণ হয়নি। একারণে দাবী আদায়ে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটি কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার স্বার্থে শিক্ষা ক্যাডারের ন্যায্য দাবির পক্ষে আপনাদের ইতিবাচক ভূমিকা প্রত্যাশা করছি।
আপনার মতামত লিখুন :