স্টাফ রিপোর্টার ঃ নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে ইজিবাইকের টোল আদায় ও কম ভাড়া আদায় নিয়ে চালকদের দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ ও সাংবাদিকসহ অন্তত ৫১ জন আহত হয়েছেন। স্থানীয়দের সহায়তায় আহতদের উদ্ধার করে মোহনগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। তাদের মধ্যে থেকে আকাশ মিয়া, জোসেফ হাসানসহ পাঁচজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এদের মধ্যে আহত অটোরিকশা চালক হাসান মিয়া (২৮) ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান। তিনি ওই উপজেলার বাকরপুর গ্রামের জজ মিয়ার ছেলে।
গত বুধবার (১৬ নভেম্বর) বিকেলে মোহনগঞ্জ পৌরশহরের রেলস্টেশন সংলগ্ন এলাকায় দফায় দফায় এ সংঘর্ষ হয়। এ সময় ৩০/৩৫টি দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ৫১ রাউন্ড রাবার বুলেট ও ১০ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে।
স্থানীয় বাসিন্দা, ইজিবাইক চালক ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার দুপুর ১২টার দিকে পৌরশহরের নওহাল বাসস্টেশন এলাকা থেকে কয়েকজন যাত্রী নিয়ে বড়কাশিয়া গ্রামের একজন ইজিবাইক চালক রেলস্টেশন সংলগ্ন এলাকায় যান। এ সময় বিরামপুর গ্রামের একজন ইজিবাইক চালক ওই চালকের ওপর অভিযোগ তুলেন- তিনি কেন কম টাকায় যাত্রী পরিবহণ করলেন। এ নিয়ে উভয় চালকের মধ্যে বাকবিতন্ডা শুরু হয়।
বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে বড়কাশিয়া গ্রামের ইজিবাইক চালক ও বিরামপুর গ্রামের ইজিবাইক চালকদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষে বিরামপুর গ্রামের বাসিন্দারা উপজেলা পরিদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহীদ ইকবালের পান্নার গেস্ট হাউস, দুটি হোটেল, আবুল হোসেনের চাউলের দোকান, জুলফিকার আলীর মনোহারির দোকান, কামরুল ইসলাম, শাহিন মিয়া ও নবাবের ফলের দোকানসহ অন্য মালিকদের প্রায় ৩০ থেকে ৩৫টি দোকান ঘর ও মালামাল ভাঙচুর করে। বিকাল ৩টা পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষ চলাকালে মোহনগঞ্জ থানার এসআই মমতাজ উদ্দিনসহ চারজন পুলিশ সদস্য, স্থানীয় ইত্তেফাকের প্রতিনিধি এসএম সারোয়ার খোকন, পথচারী শিশু শ্রাবণী আক্তার (১০), সোহাগ মিয়া (১২), শ্রমিক নুরুন্নবী মিয়া, বিকাশ মিয়া, সাইদুর রহমান, শারিক মিয়া, নুরুল আমিন, রতন মিয়া, আব্দুর রাজ্জাক, রাব্বি মিয়া, শাহিন মিয়া, রেজাউল করিম, আলী হোসেন, রানা মিয়া, তানভীর আহমেদ, জুমন মিয়া, শাহ আলম, নাজিমুল ইসলাম, আলিম পাঠান, হাসান মিয়া, আকাশ মিয়া, শহীদ আলম, মাসুম মিয়া, জোসেফ মিয়া, বাবুল মিয়াসহ অন্তত ৫১ জন আহত হন।
পরে সংঘর্ষের খবর পেয়ে নেত্রকোনা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ফাঁকা গুলি ও টিয়ারশেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ সন্ধ্যায় বলেন, ইজিবাইক চালকদের টোল ও ভাড়া নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে চার পুলিশসহ প্রায় অর্ধশত আহত হন। পরিস্থিতি বর্তমানে স্বাভাবিক রয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে নেত্রকোনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. লুৎফর রহমান সংঘর্ষে অটোরিকশা চালক হাসান মিয়ার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আপনার মতামত লিখুন :