স্টাফ রিপোর্টার : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকা মানে দুর্নীতি। আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে মানুষের উন্নয়নের জন্য কাজ করে। আওয়ামী লীগ মানুষকে ঘর দিয়েছে, মাথা গোঁজার ঠাঁই দিয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে এদেশের একটি মানুষও গৃহহীন ও ভূমিহীন থাকবে না। শনিবার (১১ মার্চ) বিকেল ৪টায় ময়মনসিংহ নগরীর সার্কিট হাউস ময়দানে আওয়ামী লীগের বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, দেশে এক ইঞ্চি মাটিও পতিত থাকবে না। দেশের আনাচে কানাচে সব মাটিতে ফসল ফলাবো। নিজের খাবারের জন্য মাঠে কাজ করতে কোনো লজ্জা নেই। আমরা নিজেরা খাদ্যশস্য উৎপাদন করে বিদেশে রপ্তানি করবো। আমরা আর কারও কাছে হাত পাততে চাই না।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি জানি খালেদা জিয়া এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলেন। অংক এবং উর্দু পরীক্ষায় পাস করেছিলেন। কারণ, উর্দু পাকিস্তানি ভাষা আর অংক হচ্ছে হিসাব করা, যা বিএনপি ভালো করেই বোঝে। জিয়া এসএসসি পাস করে চাকরি নিয়েছিলেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির ব্যবস্থা করেছি। মানুষ এখন দেশে শান্তিতে বসবাস করছে। এখন আমাদের ২১ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য মজুত আছে। বর্তমানে দেশে কোনো খাদ্য ঘাটতি নেই। আওয়ামী লীগ দেশকে ধ্বংস করেছে বলে মিথ্যাচার ছড়ানোর জন্য বিএনপি নেতাদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মিথ্যা বলা, দুর্নীতি ও লুটপাট করা তাদের অভ্যাস।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির কোন এক নেতা আছে সারাদিন মাইক লাগিয়ে বসে থাকেন। বাংলাদেশটাকে নাকি আমরা ধ্বংস করে দিয়েছি। তিনি ময়মনসিংহবাসীর উদ্দেশে প্রশ্ন করেন, ময়মনসিংহে এক যোগে ১০৩টি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন কি বাংলাদেশ ধ্বংসের নমূনা?
প্রধানমন্ত্রী এসব উন্নয়ন প্রকল্পকে স্বাধীনতার মাসে ময়মনসিংহবাসীর জন্য উপহার হিসেবে উল্লেখ করে বিভাগীয় শহর ময়মনসিংহে একটি মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয় এবং একটি প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয় করা হবে বলেও জানান।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, মিথ্যা বলাটাই বিএনপি’র পেশা। খালেদা জিয়া এতিমের অর্থ আত্মসাত এবং দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত আসামী। আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এসে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ায় আর বিএনপি ক্ষমতায় এসে তা কমিয়ে ফেলে। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে তাঁর সরকার ১৬শ’ মেগাওয়াট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়ে ৪ হাজার ৩শ মেগাওয়াট করেছিল। স্বাক্ষরতার হারকে ৬৫ ভাগে উন্নীত করেছিল যা পরবর্তী বিএনপি জামাত সরকার না বাড়িয়ে উল্টো কমিয়ে ফেলে। আজকে সেখান থেকে তাঁর সরকার দেশকে টেনে তুলে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়ে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করেছে এবং স্বাক্ষরতার হারও ৭৫ দশমিক ২ ভাগে উন্নীত করেছে। বাংলাদেশ এখন শতভাগ ডিজিটাল বাংলাদেশ বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সকলের হাতে হাতে এখন মোবাইল ফোন। কে দিয়েছে এই মোবাইল ফোন? আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে এই মোবাইল ফোন দিয়েছে। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখন ওয়াই-ফাই এসেছে। এটাই ডিজিটাল বাংলাদেশ।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম এর সভাপতিত্বে জনসভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি, সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক এমপি, আওয়ামীলীগ স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক এমপি আব্দুর রহমান, আওয়ামীলীগ কেন্দ্রিয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম, শিক্ষা মন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক সফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, মির্জা আজম এমপি, আহম্মেদ হোসেন, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক বাবু অসীম কুমার উকিল, দপ্তর সম্পাদক বিল্পব বড়–য়া, সদস্য মারুফা আক্তার পপি, সদস্য রেমন্ড আরেং, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ এমপি, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান দুলাল এমপি, সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি, সংসদ সদস্য এডভোকেট মোসলেম উদ্দিন, সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন আহম্মেদ, সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিন, সংসদ সদস্য ফাহমি গোলন্দাজ বাবেল, মোজাফ্ফর হোসেন, সংসদ সদস্য এ কে এম ফজলুল হক, হুইপ আতিয়ার রহমান আতিক, ময়মনসিংহ সিটি মেয়র মোঃ ইকরামুল হক টিটু, কেন্দ্রিয় মহিলা আওয়ামীলীগ সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি, নেত্রকোণা জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি এডভোকেট আমিরুল ইসলাম, জামালপুর জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি এডভোকেট বাকি বিল্লাহ, শেরপুর জেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার হোসেন, যুবলীগ কেন্দ্রিয় কমিটির সভাপতি শেখ ফজলে শামস পরশ, স্বেচ্ছা সেবকলীগ সভাপতি আফজালুর রহমান বাবু, ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী হাসান ইনান সহ কেন্দ্রিয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
জনসভা সঞ্চালনায় ছিলেন জেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহিত উর রহমান শান্ত ও গণপূত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ এমপি। বিভাগীয় এই জনসভায় ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুর ও জামালপুরের বিপুল সংখ্যাক নেতাকর্মী, সমর্থক, জনসাধারণ যোগ দেন। সার্কিট হাউস ময়দান ছাড়িয়ে নগরীর অলিগলিতে মানুষের ঢল নামে।
দুপুর সোয়া ২টায় প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টার যোগে নগরীর রফিক উদ্দিন ভুঁইয়া স্টেডিয়ামে অবতরণ করেন এবং দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে জনসভাস্থলে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। সার্কিট হাউস মাঠে পৌঁছে প্রায় ৫৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে সম্পন্ন ৭৩ প্রকল্পের উদ্বোধন এবং প্রায় ২ হাজার ৭৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩০টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী।
এ সময় জেলা প্রশাসক মোস্তাফিজার রহমানের সঞ্চালনায় ময়মনসিংহে ৭৩টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ৩০টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধন শেষে দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় দোয়া করেন ক্বারি মাওলানা মোফাজ্জল হোসেন সরকার।
আপনার মতামত লিখুন :