স্টাফ রিপোর্টার : ২০১৮ সালের ১৪ অক্টোবর বিলুপ্ত পৌরসভার একদিকে তীব্র লোকবল সংকট ও দুর্বল অবকাঠামো, অন্যদিকে সীমাহীন নাগরিক চাহিদা নিয়ে ২১ ওয়ার্ডের ২১ বর্গকিলোমিটারের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নগুলো থেকে আসা ১২ ওয়ার্ডের ৭০ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে যাত্রা শুরু করে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন (মসিক)। কিন্তু মাত্র চার বছরে অবকাঠামো নির্মাণ ও নাগরিক সেবায় যতটুকু অগ্রগতি করেছে তরুণ মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটুর নেতৃত্বাধীন ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন, তা প্রশংসা পাচ্ছে নাগরিক মহলে। বিশেষ করে এই মুহূর্তে মসিকের প্রতিটি ওয়ার্ডের মূল সড়ক ও অলিগলিতে দেখা যাচ্ছে সড়ক ও ড্রেনের নির্মাণকাজ এবং আধুনিক এলইডি বাতি স্থাপন।
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, এ মুহূর্তে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের সড়ক ড্রেনেজ অবকাঠামো নির্মাণ ও নাগরিক সেবা উন্নতকরণ প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রায় ৫৬৩ কোটি টাকার কাজ চলমান। এতে তৈরি হচ্ছে ৯৭ কিলোমিটার আরসিসি, ৭৮ কিলোমিটার বিসি ও ২ কিলোমিটার সিসি সড়ক, ৮৫ কিলোমিটার ড্রেন এবং ৭ কিলোমিটার ফুটপাত। ময়মনসিংহ শহরের উন্নয়নে একসঙ্গে এত কাজ আগে কখনো হয়নি।
এ ছাড়া সিটি কর্পোরেশন অন্যান্য প্রকল্প থেকে এই চার বছরে ৮০ কিলোমিটার নতুন রাস্তা এবং ৪৩ কিলোমিটার ড্রেনের কাজ সম্পন্ন করেছে। নগরের অন্যতম সমস্যা ছিল জলাবদ্ধতা। সেটি নিরসনে শুরু থেকেই কাজ করছিল সিটি কর্পোরেশন। ইতোমধ্যে মূল শহরের অভ্যন্তরে জলাবদ্ধতার সমস্যা অনেকটাই নিরসন হয়েছে। বর্তমানে চলমান নতুন বাজার লেভেল ক্রসিং থেকে ব্যাটবল চত্বর পর্যন্ত আন্ডারগ্রাউন্ড পাইপ ড্রেনের কাজ একটি ভালো উদ্যোগ বলে মনে করছেন নগরবাসী। এতে খালগুলো থেকে পনি বের হওয়া আরও সহজতর হবে, যা সামগ্রিক জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাবে।
শহর আলোকিতকরণে নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ডের প্রায় ১৬৫ কিলোমিটার সড়কে পোলসহ আধুনিক এলইডি বাতি স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে পৌরসভা থেকে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনে উত্তরণের পর যে বিষয়টি সবার নজর কেড়েছে, তা হলো বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। বিলুপ্ত পৌরসভার জনবল নিয়েও প্রতিদিন প্রায় ৫০০ টন বর্জ্যের ব্যবস্থাপনা করছে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন। চলছে রাত্রীকালীন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। এ ছাড়া বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহে ক্লিনসিটি নামক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে বর্জ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় প্রিজম ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় নির্মাণ করা হচ্ছে ট্রিটমেন্ট প্লান্ট। এ ছাড়াও বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রকল্পটিও অনুমোদনের অপেক্ষায়।
অবশ্য, নগর উন্নয়নে আরও অগ্রগতি সম্ভব ছিল বলে মনে করেন সিটি কর্পোরেশন মেয়র মোঃ ইকরামুল হক টিটু। তিনি জানান, করোনার অভিঘাত এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সৃষ্ট বৈশ্বিক সংকট সৃষ্টি না হলে নগর উন্নয়নে আরও কাজ করা সম্ভব হতো।
তবে করোনা পরিস্থিতিতে ময়মনসিংহ সিটি ঝুঁকি নিয়ে যেভাবে করোনা মোকাবিলা, মানুষকে নিরাপদে রাখা এবং মানুষের কাছে মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে যে কাজ করেছে, তা সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। সরকারি ও সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ১৩২৭ টন চাল ও ৬৫ লাখ টাকার খাদ্য সহায়তা ছাড়াও মেয়র নিজ উদ্যোগে লক্ষাধিক প্যাকেট খাদ্যসামগ্রী অসহায় মানুষের মধ্যে বিতরণ করেছেন। কভিড টিকার রেজিস্ট্রেশন সহায়তা, এলাকা ও গ্রুপভিত্তিক টিকা ক্যাম্পেইন ইত্যাদি কারণে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন এলাকার প্রায় ৯৫ ভাগ মানুষকে ২ ডোজ টিকা প্রদান করা সম্ভব হয়েছে।
এ ছাড়া ২০২২ সালে স্থাপন করা হয়েছে একটি নগর মাতৃসদন এবং তিনটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র। এসব কেন্দ্র থেকে মা, শিশুসহ সাধারণ জনগণ কম খরচ বা বিনামূল্য স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন।
মশক নিধনে হটস্পট চিহ্নিতকরণ এবং নিয়মিত ক্রাশ প্রোগ্রামের ফলে সিটিতে এখনো স্থানীয়ভাবে এডিস মশার কামড়ে আক্রান্ত ডেগু রোগী পাওয়া যায়নি। তা ছাড়া ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন, ইপিআই কার্যক্রম, কৃমি নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদিতেও মসিকের রয়েছে শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সফলতা।
প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে মসিকের প্রচেষ্টাও চোখে পড়ার মতো। ২০১৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৯২ জনকে বিউটি পার্লার, কম্পিউটার, ড্রাইভিং, মোবাইল সার্ভিসিং ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ, ২ হাজার ৫৭৬ শিক্ষার্থীকে শিক্ষাবৃত্তি, ১৪৭৬ জনকে পুষ্টি সহায়তা, ৩১২ কিশোরীকে স্বাস্থ্য-পুষ্টি পরামর্শ ও পুষ্টি উপকরণ প্রদান, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য নলকূপ, রোড লাইট, ড্রেন, টয়লেট, সেপটিক ট্যাঙ্ক ইত্যাদি নির্মাণের মাধ্যমে সহযোগিতা প্রদান করেছে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন।
বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ছড়িয়ে দিতে মেয়র ইকরামুল হক টিটু শম্ভুগঞ্জ ব্রিজির কাছে স্থাপন করেছেন জয় বাংলা চত্বর। চত্বরটি মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর স্মরণে এক অনন্য স্থাপত্যে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া টাউনহলে স্থাপন করেছেন বঙ্গবন্ধু গ্যালারি। এখানেও প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনার্থী বঙ্গবন্ধুর দুর্লভ ছবি, ডকুমেন্টারি, বাণী ইত্যাদি দেখার সুযোগ পাচ্ছেন। নাগরিক সেবার মানোন্নয়নে ইতোমধ্যে মসিকের বেশ কিছু সেবাকে অনলাইনে নেওয়া হয়েছে। সিটি কর্পোরেশনকে তিনটি অঞ্চলে বিভক্ত করে জন্মনিবন্ধন, মশক নিধন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি কাজের বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছে। এতে নাগরিকের সময় ও শ্রম সাশ্রয় হচ্ছে।
মেয়র ইকরামুল হক টিটু এ প্রসঙ্গে বলেন, প্রধানমন্ত্রী যে স্বপ্নে ময়মনসিংহবাসীকে সিটি কর্পোরেশন উপহার দিয়েছেন, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করছি। করোনা মহামারি ও বৈশ্বিক সংকট আমাদের গতিকে কিছুটা ধীর করে দিলেও আমরা জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি।
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, সিটিকে একটি আধুনিক ও টেকসই নগরী করতে একটি শিশু পার্ক, নগর ভবন, গোরস্তান, শ্মশানঘাট, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট নির্মাণে কাজ করছে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে নগরবাসীর প্রত্যাশা অনেকাংশে পূরণ হবে।
আপনার মতামত লিখুন :