সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৬:১৬ পূর্বাহ্ন
নোটিশ::
দৈনিক স্বদেশ সংবাদ লাইভ খবর পড়ুন

প্রসঙ্গ ঃ প্রচলিত সৃজনশীল শিক্ষা পদ্ধতি ও দক্ষ মানব সম্পদ-লেখক: মোহাম্মদ মাহবুব আলম

রিপোর্টার / ১২০ ভিউ
আপডেট সময় : সোমবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২২, ৪:২৩ অপরাহ্ন

করোনা পরবর্তী ৪র্থ শিল্প বিল্পবের উপযোগী মানব সম্পদের দক্ষতা ও কর্মক্ষমতা বাড়াতে মুখস্ত নির্ভর সৃজনশীল পদ্ধতির শিক্ষার গ্রহনযোগ্যতা নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতার কষ্টি পাথরে উত্তীর্ণ বর্তমান সরকারের শিক্ষা প্রসারে গৃহীত উদ্যোগ প্রশংসনীয়। কিন্তু পরিবর্তীত বিশ্ব পরিস্থিতিতে শিক্ষা কে হতে হবে বাস্তব ও সময়োপযোগী। বিশ্ব মানের যুগোপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে কাঙ্খিত মানব সম্পদ নিশ্চিত করা সম্ভব।

সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা আমাদের এই বাংলাদেশ মূলতঃ কৃষি অর্থনীতি নির্ভর। গ্রামীন অর্থনীতি এই দেশের প্রাণ। বিগত দশকগুলোতে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে কর্ম সংস্থানের সংকট দেখা দিয়েছে। পরিসংখ্যান ব্যুারোর হিসাবে কৃষি জমির পরিমান জন প্রতি ১৫ শতাংশের নিচে। এমতাবস্থায় কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মাধ্যমেই আমাদের খাদ্যে সয়ং সম্পূর্নতা আসবে। একজন মাস্টার ট্রেইনার (সৃজনশীল ) হিসেবে সৃজনশীল পদ্ধতির কিছু দুর্বলতা চোখে পড়েছে।

কোন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রাণভোমরা হলো ঐ দেশের দক্ষ মানব সম্পদ। বুনিয়াদি ও ডিজিটাল শিক্ষা ব্যবস্থার ফসল হলো দক্ষ মানব সম্পদ। প্রাথমিক, (আংশিক) মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে সৃজনশীল পদ্ধতি অনুসরন করা হয়। পদ্ধতিটিতে সৃজনশীলতার বিকাশ ও তার বাস্তবায়ন কতটুকু তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। ১৫০ পৃষ্ঠার পাঠ্যবইয়ের ৩০০ পৃষ্ঠার একটি সহায়ক বা গাইড দরকার। এই গাইড বই আবার নামি দামি প্রতিষ্ঠিত প্রকাশনির রঙ বেরংঙের হয়ে থাকে।

ছাত্রছাত্রীদের কাছে কঠিন বিষয়ের জন্য আমাদের শ্রেণি শিক্ষকরা একাধিক গাইড বই কিনতে বাধ্য করেন। সরকার তার নিজস্ব অঙ্গিকার রক্ষা করে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত বিনা মূল্যে বই বিতরন করে। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক বাধ্য বাধকতা ও ছাত্রছাত্রীদের জড়তা দুর করতে সংশ্লিষ্ট গাইড, মেইড ইজি, উত্তর মালা কিনতে মোটা অঙ্কের টাকা লাগে। যা বর্তমান দ্রব্যমলে্যূর উর্ধ্বগতির একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য জুলুম ও দরিদ্র পরিবারের জন্য অসম্ভব প্রায়। বাস্তবতার আলোকে মনে হয়, পড়াশুনার মূল বিষয়বস্তু বরেন্য শিক্ষাবিদদের প্রণীত বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত পাঠ্যবইয়ে নেই, আছে শুধু গাইড বইয়ে। এই অবস্থায় সরকারী অর্থে লালিত শিক্ষক শিক্ষাবিদগণ কী বা কতটুকু দায়িত্ব পালন করছেন কোমলমতি শিক্ষার্থীদের দক্ষ করতে।

আর কোচিংয়ের কথা না বললেই নয়। সংসার চালাতে যেখানে হিমশিম খাচ্ছে অভিভাবকরা, সেখানে আরও অর্থ সংকটে ফেলছে এই কোচিং সেন্টারগুলো। কিন্তু অস্বীকার করা প্রায় অসম্ভব যে, কোচিং ছাড়াও একজন শিক্ষার্থী জ্ঞানের পরিপূর্ণতা পায়না। ক্ষনে ক্ষনে মনে হয় একই শিক্ষক বিদ্যালয়ে পাঠদান করলে যেমনটি হয়, কোচিংয়ে পাঠদান করলে সেটি আরও বস্তুনিষ্ঠ ও আন্তরিকতা পূর্ণ হয়। একবার না বুঝলে একাধিকবার বুঝে নিতে ও বুঝিয়ে দিতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়। যা বিদ্যালয়ে খুব কমই চোখে পড়ে। উচ্চ মাধ্যমিকের একজন শিক্ষক হিসেবে লক্ষ্য করি শিক্ষার্থীরা পাঠ্য বইয়ের অনেক সৃজনশীল প্রশ্ন অনুধাবনে ব্যর্থ হয়। গাইড বইয়ের সাহায্য নিতে চায়। উদ্দীপকগুলো সমাজাতীয় হওয়ায় তাদের মধ্যে হতাশা কাজ করে । পাঠ্যাভ্যাসের অভাব ও প্রযুক্তি নির্ভরতার দরুন তাদের মানসিক চাপও লক্ষ্যনীয়। বর্তমান বাস্তবতায় প্রত্যয়ী ,দক্ষ ও কর্মক্ষম উদ্যোগী মানব সম্পদ প্রয়োজন। তাদের দক্ষতা বাড়াতে গাইড নির্ভর সৃজনশীল পদ্ধতি কতটুকু কাজে লাগবে তা আলোচনার বিষয়।

জ্ঞানি ও প্রজ্ঞাবান দুটি আলাদা বিষয়। জ্ঞানি হলো-যিনি কোন বিষয় জানেন এবং বুঝেন। আর প্রজ্ঞাবান হলো- যিনি কোন বিষয় জেনে ও বুঝে সেটি প্রয়োগ করে থাকেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের তাত্ত্বিক জ্ঞান দিয়ে তাদেরকে জ্ঞানি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তারা কি প্রজ্ঞাবান হতে পারছে? না পারলে তা কেন বা কিসের কারণে ?

আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দেশের প্রয়োজনে মানব সম্পদকে হতে হবে প্রজ্ঞাবান ও উৎপাদনমুখী। তাই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে কর্মস্বংস্থানের লক্ষ্যে সর্তক দৃষ্টি দেওয়া আবশ্যক। তবেই পাওয়া যাবে কাঙ্খিত মানব সম্পদ এবং সচল থাকবে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের চাকা।

 

মোহাম্মদ মাহবুব আলম
প্রভাষক রাষ্ট্রবিজ্ঞান
কাচিনা কে. ইউ ফাজিল মাদ্রাসা
মাস্টার ট্রেইনার (সৃজনশীল পদ্ধতি) বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ
Theme Created By ThemesDealer.Com