রঞ্জন মজুমদার শিবু : “বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরন বিনামূল্যে আইনি সেবার দ্বার উন্মোচন” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ময়মনসিংহে জেলা লিগ্যাল এইড কমিটি এবং সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ এর আয়োজনে বর্ণাঢ্য র্যালী, আলোচনা সভা, লিগ্যাল এইড মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস উদযাপন করা হয়েছে। শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) সকালে নগরীর চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গণ থেকে সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ এবং জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান মমতাজ পারভীন এর নেতৃত্বে বর্ণাঢ্য র্যালী শুরু হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে শেষ হয়। র্যালীতে বিজ্ঞ বিচারক বৃন্দ, বিজ্ঞ আইনজীবী গন সহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ অংশ গ্রহণ করেন।
র্যালী শেষে একই স্থানে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ এবং জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান মমতাজ পারভীন। এসময় তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা, স্বাধীনতার মহান স্থপতি, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিল একটি শোষণমুক্ত সমাজ বিনির্মাণ করা- যেখানে ধনী, দরিদ্র, হিন্দু, মুসলমান, নারী, পুরুষ নির্বিশেষে সবাই আইনের দৃষ্টিতে হবেন সমান, তাদের সবার আইনের সমান সুযোগ লাভের অধিকার থাকবে, সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবে ন্যায়, সাম্য, স্বাধীনতা, এবং সবার জন্য বিচার হবে সুনিশ্চিত। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ২০২৩ সালে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস -এর প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে। “বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরন বিনামূল্যে আইনি সেবার দ্বার উন্মোচন”।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ সংবিধান প্রত্যেক নাগরিকের আইনে সমান আশ্রয় লাভের অধিকার দিয়েছে। সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী। এছাড়া সংবিধানের ৩১ ও ৩২ অনুচ্ছেদে ন্যায়বিচার ও সার্বজনীন মানবাধিকারের বিষয় যথেষ্ঠ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়েছে। ১৯৪৮ সালে ‘সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্র’ গৃহীত হয়। উক্ত ঘোষণাপত্রের অনুচ্ছেদ ৭এ অনুযায়ী কোনো বৈষম্য ছাড়া আইনি প্রতিকার পাওয়ার ক্ষেত্রে সবার সমান অধিকার নিশ্চিত হয়েছে। এই বিষয়গুলোর সফল বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশে আইনগত সহায়তা কার্যক্রম চালু করা হয়। এটি কোনো সাহায্য নয়, এটি নাগরিক অধিকার। শুধু আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে কোনো নাগরিক যেন বিচার প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত না হোন, সেজন্য বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা দেশরতœ শেখ হাসিনার সরকার ২০০০ সালে সর্বপ্রথম ‘আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০’ প্রণয়ন করেন। ২০০০ সালে লিগ্যাল এইড কার্যক্রম চালু হলেও পরবর্তীতে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত এর কার্যক্রম স্থবির থাকে। ২০০৯ সালের পর তা পুনরায় চালু হয় এবং তা সক্রিয়করণের জন্য সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। আর্থিকভাবে অসচ্ছল, দরিদ্র, নির্যাতিত, সহায়-সম্বলহীন এবং নানাবিধ আর্থসামাজিক কারণে বিচার প্রাপ্তিতে অসমর্থ বিচারপ্রার্থী জনগণের জন্যই মূলত ‘আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০’ প্রণয়ন করা হয়। গঠন করা হয় জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা যার মাধ্যমে আইনগত সহায়তাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ প্রদান করা হয়।
আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের বিচারক আনিসুর রহমান, স্পেশাল জজ শাহাদাত হোসেন, সাইবার ট্রাইবুনালের বিচারক (জেলা জজ) বজলুর রহমান, চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মমিনুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক মোঃ মোস্তাফিজার রহমান, পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আবুল কালাম আজাদ, বিজ্ঞ পাবলিক প্রসিকিউটর বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট কবীর উদ্দিন ভূইয়া, বিজ্ঞ আইনজীবী এডভোকেট সাইফুল ইসলাম, সেরা প্যানেল আইনজীবী এডভোকেট মায়া সুলতানা, এডভোকেট শিব্বির আহম্মেদ লিটন প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিনিয়র সহকারী জজ ও ভারপ্রাপ্ত জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার পবন চন্দ বর্মন। আলোচনা সভা সঞ্চলনায় ছিলেন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ রাশেদ হোসাইন ও সহকারি জজ মাহফুজা আক্তার মিতু।
এসময় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ বৃন্দ, সকল পর্যায়ের বিজ্ঞ বিচারক বৃন্দ, বিজ্ঞ আইনজীবীগণ, লিগ্যাল এইড এর প্যানেল আইনজীবী বৃন্দ, প্রশাসনের কর্মকর্তা বৃন্দ, জেলা জজশীপ ও ম্যাজিস্ট্রেসির কর্মকর্তা কর্মচারীবৃন্দ, এনজিও প্রতিনিধি রোভার স্কাউট, বিএনসিসির সদস্যবৃন্দ, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যবৃন্দ, লিগ্যাল এইড এর সেবা গ্রহিতাবৃন্দ সহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক বৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। আলোচনার শুরুতে ২ জন সেরা প্যানেল আইনজীবীকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয় ।বিকেলে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।