স্টাফ রিপোর্টার : সংগ্রাম স্বাধীনতা প্রেরণায় বঙ্গমাতা এই প্রতিপাদ্য নিয়ে ময়মনসিংহে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব এর ৯৩ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা. স্মৃতিচারণ এবং জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উদ্যোগ কর্মক্ষম, অসহায় ও অসচ্ছল নারীদের মধ্যে ১০৫টি সেলাই মেশিন বিতরণ করা হয়। সোমবার (৮ আগষ্ট) সকালে নগরীর জেলা পরিষদের ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার মিলনায়তনে জেলা প্রশাসনের আয়োজন এ আলোচনা সভা ও সেরাই মেশিন বিতরণ করা হয়।
উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিভাগীয় কমিশনার উম্মে সালমা তানজিয়া। জন্মদিবস পালনের তাৎপর্য তুলে ধরে তিনি বলেন, জাতির পিতার ভাগ্যে এমন এক মহীয়সী নারী এসেছিল যার প্রেরণায় বঙ্গবন্ধু তাঁর কাজের সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে ছিলেন। এ দেশের প্রতিটি সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর সফল হওয়ার নেপথ্যে ঘরের যে মানুষটি শক্তি যোগীয়েছিল সে আর কেউ নয়, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব। বঙ্গবন্ধুর আন্দোলনে একটি দেশের সৃষ্টি। এ আন্দোলন সংগ্রামকে বেগবানে ও উদ্দীপনার আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছেন এই নারী। স্বামীকে জেল হতে মুক্তি দিতে চাইলেও অসম্মানজনক কাজ হবে বলে বঙ্গবন্ধুর সাথে একমত হননি তিনি। বরং প্যারোলে জেল থেকে মুক্তি নিলে স্বামীর বিরুদ্ধে রাস্তায় আন্দোলনে নামবে বলে জানিয়ে দেন বঙ্গমাতা। জেলে বসে বঙ্গবন্ধুর লেখার পিছনে উৎসাহ জুগিয়েছেন, নিজের পয়সা দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে বই কিনে দিয়েছেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ সৃষ্টিতে বঙ্গমাতা বলেছিলেন, দেশকে নিয়ে দেশের মানুষকে নিয়ে যা ভাবছো, তোমার ভেতরে যা আছে, সেটাই তুমি প্রকাশ করবে। সত্যিই লিখিত কোনো রূপ ছিল না ঐ ভাষণের। বাঙ্গালির মুক্তির প্রেরণা এ ভাষণের পেছনে বঙ্গমাতার অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। বঙ্গবন্ধু তার আত্মজীবনীর প্রথম পাতা শুরু করেছিলেন সঙ্গী সহধর্মিণীর কথা দিয়ে। কেননা বেগম মুজিবের তাগিদেই এ প্রজন্মের বাঙালি আজ হাতে পেয়েছে স্বাধিকার আন্দোলনের এক অমূল্য দলিল।
জেলা প্রশাসক মোঃ মোস্তাফিজার রহমান এর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন রেঞ্জ ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য, পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা, জেলা আওয়ামিলীগ সভাপতি এহতেশামুল আলম, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল প্রমুখ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ময়মনসিংহ জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নাজনীন সুলতানা। আলোচনা সভায় বিভাগীয় ও জেলার পর্যায়ের কর্মকর্তা, বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ, নারী উদ্যোক্তা, উপকারভোগী, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ ও সুধীজন উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা সভা শেষে অসচ্ছল মহিলাদের মাঝে সেলাই মেশিন বিতরণ করেন প্রধান অতিথি বিভাগীয় কমিশনার উম্মে সালমা তানজিয়া। এছাড়া অত্র অঞ্চলের ৩০০ জন অসচ্ছল নারীকে মাসে ২০০ টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রেঞ্জ ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য্য বলেন, বঙ্গমাতা, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ এই তিনটি শব্দকে কখনোই বিচ্ছিন্ন করা যায়না। পৃথিবীতে অনেক জাতি আছে যারা স্বাধীন হওয়ার জন্য যুগের পর যুগ চেষ্টা করছে। কিন্তু স্বাধীনতা অর্জন করতে পারেনি। মাত্র ২৩ বছরে একজন মহান নেতার নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। যে নারীর চেতনা, উৎসাহ, প্রেরণায় বঙ্গবন্ধু আমাদের মুক্তি এনে দিয়েছিলেন সেই মানবীয় মহীয়সী নারী হচ্ছেন বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব। দেশের প্রতি যার ছিল আশ্চর্য রকম দরদ। বঙ্গমাতার অবদান ও আদর্শকে আমাদের স্বীকার করতে হবে।
সভাপতির বক্তৃতায় জেলা প্রশাসক মোঃ মোস্তাফিজার রহমান বলেন,বঙ্গবন্ধু শুধু একটি নাম নয় এটি একটি দেশ। এদেশের পেছনে যিনি একাধারে একজন মা, গৃহিণী রাজনৈতিক উত্তম সহচর, দলের প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছেন তিনি হচ্ছেন এই বঙ্গমাতা নারী বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব। জাতির পিতার মূল শক্তির প্রেরণা তিনি।
দিনব্যাপী জেলা তথ্য অফিসের আয়োজনে শহরের রেলওয়ে কৃষ্ণচূড়া চত্বর, টাউন হল মোড়, চায়না মোড় ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জীবনীভিত্তিক ভিডিও চিত্র/ প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
আপনার মতামত লিখুন :