ময়মনসিংহ অঞ্চলের সংস্কৃতি অত্যন্ত সমৃদ্ধ-সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী


swadeshsangbad প্রকাশের সময় : জুন ১৮, ২০২৩, ৯:০৯ পূর্বাহ্ন / ৮৫
ময়মনসিংহ অঞ্চলের সংস্কৃতি অত্যন্ত সমৃদ্ধ-সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার : সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায়, বাংলা একাডেমির সমন্বয়ে এবং ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের ব্যবস্থাপনায় ২ দিনব্যাপী বিভাগীয় সাহিত্য মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (১৭ জুন) সকালে নগরীর এডভোকেট তারেক স্মৃতি অডিটোরিয়ামে এ সাহিত্য মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
সাহিত্য মেলা বেলুন উেিয় আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন করেন এবং আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি। তিনি বলেন, সাংস্কৃতির জনপদ ময়মনসিংহ। অত্র অঞ্চলের সংস্কৃতি অত্যন্ত সমৃদ্ধ। ময়মনসিংহ, শেরপুর এবং কিশোরগঞ্জের সংস্কৃতিতে দাপট ছিল সবচেয়ে বেশী। ময়মনসিংহের সংস্কৃতিতে রয়েছে সুদীর্ঘ কালের ইতিহাস। এছাড়া ৮০ এবং ৯০ এর দশকে লেখালেখিতে যে সমৃদ্ধ ছিল এখন তা আর নাই। এখন লেখালেখি ছেড়ে সবাই ফেইসবুক নিয়ে ব্যস্ত। সারাদিন শুধু ফেইসবুক আর ফেইসবুক। বাংলা সাহিত্যে একজন সনামধন্য ছড়ার যাদুকর ছিলেন তিনিও কিন্তু ময়মনসিংহের কৃতি সন্তান। তিনি হচ্ছেন সুকুমার রায়। আরেক যাদুকর পিসি সরকার তিনিও ময়মনসিংহের সন্তান। তাই কর্মের মাধ্যমে লেখার মাধ্যমে ময়মনসিংহের সাহিত্যকে জাগিয়ে তুলতে হবে।
বিভাগীয় কমিশনার মোঃ শফিকুর রেজা বিশ্বাস এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সাবেক সচিব লেখক ও গবেষক কে এইচ মাসুদ সিদ্দিকী, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মো: মিজানুর রহমান, জেলা প্রশাসক মোঃ মোস্তাফিজার রহমান, জেলা আওয়ামিলীগ সভাপতি এহতেশামুল আলম প্রমুখ। প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মোঃ আনোয়ার হোসেন।
সাবেক সচিব লেখক ও গবেষক কে এইচ মাসুদ সিদ্দিকী বলেন, চন্দ্র কুমার দে এর সহযোগিতায় ময়মনসিংহ গিতীকা সংরক্ষিত হয় ১৯২৩ সালে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মযমনসিংহ গিতীকা প্রকাশিত হয় এবং পরবর্তী বছরে এর ইংরেজী ভার্সন প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত হওয়ার পর বিশ্বের সুধিমন্ডলী, সুধিজন এই ময়মনসিংহ গিতীকা নিয়ে তুলপার শুরু হয়ে যায়। আজ থেকে ৬০ বছর আগে কিশোরগঞ্জে এক সাহিত্য সম্মেলনে ড. মোঃ শহিদুল্লাহ বলেছিলেন ময়মনসিংহ সাহিত্যের রতœ ভান্ডার এবং বাংলা সাহিত্যের শুভ সূচনা হয়েছে ময়মনসিংহের গিতীকার মাধ্যমে। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন ময়মনসিংহ গিতীকায় যে সুর বেজে উঠেছে সেটা বিশ্ব সাহিত্বের সুর এবং আমাদের ময়মনসিংহ গিতীকার যে কবিরা এমন একটি আনন্দের কবিতার অমরাবতী নির্মাণ করেছেন যেটা বিশ্বের বোধমন্ডলীকে আনন্দে উদ্বেলিত করেছে। তিনি আরো বলেন, হিন্দু মুসলমান মিলিত নিশ্বাসে পুষ্ট হয়েছে এই গিতীকা। আমরা যে আজকে নারীবাদি আন্দোলনের কথা বলি, নারীদের শক্তির কথা বলি, তাদের প্রতিবাদের কথা বলি ময়মনসিংহ গিতীকার নারীরা অনেক আগে থেকেই কিন্তু এই ধরণের শক্তি সাহসের পরিচয় দিয়েছেন। সাহিত্যের আরেকটা দিক হচ্ছে উচ্চাংগ সংগীত। এই ময়মনসিংহ শহরে উচ্চাংগ সংগীতের যে সাধনা হয়েছে তা জমিদাররা শিক্ষা স্বাস্থ্য এবং সংগীতের ক্ষেত্রে ময়মনসিংহে যে অবদান রেখে ছিলেন তা অভুতপূর্ব। ময়মনসিংহে লোক সংগীতের যে সমৃদ্ধ ভান্ডার তা বাংলাদেশের কোথাও নেই। চেকোস্লাভাকিয়ার পন্ডিত ভারত বিষারদ জেমিকা এই ময়মনসিংহে এসেছিলেন এবং নেত্রকোণায় গিয়েছিলেন কবি জসিম উদ্দিনকে সংগে নিয়ে এবং তিনি ফিরে এসে লিখেছিলেন ফোক কালচারের আতœা হচ্ছে ময়মনসিংহ। বাংলা সাহিত্যে ময়মনসিংহ এর তুলনা নাই এবং আমরা অত্যন্ত গৌরবান্বিত।
বিভাগীয় কমিশনার মোঃ শফিকুর রেজা বিশ্বাস বলেন, ময়মনসিংহ সংস্কৃতির চারণক্ষেত্র। যারা বই লিখেন তারা অত্যন্ত পরিশোধিত মানুষ। তারা কখনও অন্যের ক্ষতি করে না। লেখনি সর্বক্ষেত্রের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ন ভ’মিকা রাখে। তাই বর্তমানে বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বেশী বেশী সংস্কৃতি চর্চা করতে হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, ময়মনসিংহ বিভাগের ৪ জেলার কবি, সাহিত্যিক, গবেষক ও লেখক বৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। পরে দুপুর ০২.৩০ মিনিটে ‘প্রবন্ধ পাঠ ও আলোচনা’, বিকাল ৫.০০ টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
জানা যায়, তৃণমূল পর্যায়ে যারা সাহিত্যচর্চা করেন তারা যাতে মূল ধারায় আসতে পারে সেই লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জেলা এবং বিভাগীয় পর্যায়ে সাহিত্যমেলা আয়োজনের নির্দেশনা প্রদান করেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উক্ত নির্দেশনার আলোকে মূল পর্যায়ের কবি-সাহিত্যিকদের সাহিত্যকর্ম জাতীয় পর্যায়ে জনসম্মুখে তুলে ধরার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বাংলা একাডেমি, জেলা প্রশাসন এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত উদ্যোগে সারা দেশের ন্যায় ময়মনসিংহ বিভাগের ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, জামালপুর ও শেরপুর জেলায় সাহিত্যমেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে।