স্টাফ রিপোর্টার : মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ) কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষিত কর্মসূচীর অংশ হিসেবে ময়মনসিংহ জেলা শাখার উদ্যোগে সোমবার (১৯ জুন) দুপুরে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ময়মনসিংহ জেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব মোঃ চাঁন মিয়া, লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আনোয়ার হোসেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি শামছুন্নাহার বেগম, যুগ্ম সম্পাদক এরশাদুর রহমান, ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি মোঃ শরাফ উদ্দীন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও গৌরীপুর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মোঃ আজিজুল হক, ময়মনসিংহ জেলা শাখা সাংগাঠনিক সম্পাদক আতা মোঃ আব্দুল্লাহ আল আমিন, প্রচার সম্পাদক মোঃ নাজমুল আহসান প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বিটিএ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড’। তাই শিক্ষা যদি জাতির মেরুদন্ড হয়, তাহলে শিক্ষক হচ্ছেন শিক্ষার মেরুদন্ড, সমাজ ও সভ্যতার বিবেক এবং জাতি গঠনের স্থপতি। দেশের সিংহভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে এমপিওভূক্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী দ্বারা। পরিতাপের বিষয় আমরা এমপিওভূক্ত শিক্ষকগণ মাত্র ১,০০০ টাকা বাড়ি ভাড়া, ২৫% উৎসব ভাতা এবং ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পাই। অথচ একই কারিকুলামের অধীন একই সিলেবাস, একই একাডেমিক সময়সূচি, একইভাবে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজে নিয়োজিত থেকেও আর্থিক সুবিধার ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে রয়েছে পাহাড়সম বৈষম্য। এছাড়াও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বেতন স্কেল সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বেতন স্কেলের একধাপ নিচে প্রদান করা হয়। তাছাড়া সহকারি প্রধান শিক্ষকদের উচ্চতর স্কেল প্রদান না করার ফলে উচ্চতর স্কেলপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষকদের বেতন স্কেল ও সহকারি প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেল সমান হওয়ায় সহকারি প্রধান শিক্ষকদের মধ্যে দীর্ঘদিনের অসন্তোষ রয়েছে। তিনি আরো বলেন, বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরে যাবার পর অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা পেতে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। ফলে অনেক শিক্ষক/কর্মচারী টাকা পাওয়ার পূর্বেই অর্থাভাবে বিনা চিকৎসায় মৃত্যুবরণ করছেন। তাছাড়া কয়েক বছর যাবৎ কোন প্রকার সুবিধা না দিয়েই অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্ট খাতে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন থেকে অতিরিক্ত ৪% কর্তন করা হচ্ছে যা অত্যন্ত অমানবিক। তাই অতিরিক্ত ৪% কর্তনের প্রতিবাদে আমরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলসহ অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্ট অফিস ঘেরাও করতে বাধ্য হয়েছিলাম। পরিতাপের বিষয় অদ্যাবধি কোন প্রতিকার পাইনি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। স্বপ্নের পদ্মা সেতু তৈরি, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপন, বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ, রূপপুর পারমানবিক বিদুৎ কেন্দ্র ও মাতার বাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে কোটি কোটি বই বিতরণ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়ন, মেট্রোরেল নির্মাণ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন, রাস্তা- ঘাট তৈরি, ব্রিজ-কলাভার্ট নির্মাণসহ বিভিন্ন সেক্টরে যেভাবে উন্নয়ন হয়েছে, শিক্ষা ও শিক্ষকদের উন্নয়ন সেভাবে গুরুত্ব পায়নি। বর্তমান সরকার ইতোমধ্যেই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের ঘোষণা দেয়ায় বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ)’র পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। তবে আমরা বিশ্বাস করি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। স্মার্ট জাতি গঠন করতে হলে দরকার স্মার্ট শিক্ষক। তাই স্মার্ট শিক্ষক ও দক্ষ মানবসম্পদ পেতে হলে শিক্ষায় বিনিয়োগ বৃদ্ধিসহ মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের কোন বিকল্প নেই।
তিনি আরো জানান, পূর্বঘোষিত ১৪ জুন থেকে ২০ জুন, ২০২৩ পর্যন্ত সারাদেশের জেলায় জেলায় মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন’ করছি। আগামী ২৫ জুন, ২০২৩ তারিখ পর্যন্ত মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে “ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও মাননীয় সংসদ সদস্যদের সাথে মতবিনিময়’ এবং ‘লিফলেট বিতরণ’ করা হবে। এতদসত্বেও ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের জাতীয় বাজেট পাসের পূর্বেই মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না দিলে আগামী ১১ জুলাই ২০২৩ থেকে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাব এর সমনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি’ পালন করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :