রঞ্জন মজুমদার শিবু ঃ মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) ১৭ আশ্বিন শারদীয় দুর্গাপূজার মহানবমী। সকাল সাড়ে ৬টায় মহানবমী (বিহিত) পূজা শুরু। সকাল সাড়ে ১০ টায় পুস্পাঞ্জলী প্রদান। সোমবার (৩ অক্টোবর) পালিত হয়েছে মহা-অষ্টমী ও কুমারী পূজা। মন্ডপে মন্ডপে ভক্ত ও দর্শনার্থীদের ছিল উপচেপড়া ভীড়। মহা-অষ্টমী পূজা শেষে মন্ডপে মন্ডপে অঞ্জলী প্রদান, চন্ডীগ্রন্থ পাঠ, প্রার্থনা ও প্রসাদ বিতরণ করা হয়। এদিন সকাল ১১টায় ময়মনসিংহ রামকৃষ্ণ আশ্রম ও মিশনে কুমারীপূজা অনুষ্ঠিত হয়। কুমারী হচ্ছে এক বালিকার মধ্যে শুদ্ধাত্মা নারীর রূপ চিন্তা করে সনাতনধর্মীরা তাকে ‘দেবী’ জ্ঞানে পূজা করেন। শ্র্রীরামকৃষ্ণের কথামৃতে বলা আছে-‘সব স্ত্রীলোক ভগবতীর এক-একটি রূপ। শুদ্ধাত্মা কুমারীতে ভগবতীর প্রকাশ। ৫ থেকে ১২ বছরের বালিকাকে সাজানো হয় কুমারী মাতৃকারূপে। মাতৃকাশক্তির বীজরূপা হচ্ছে বালিকা। পুণ্যার্থীরা কুমারী মায়ের সামনে প্রার্থনায় সমবেত হন। সব নারীতে মাতৃরূপ উপলব্ধি করাই কুমারী পূজার লক্ষ্য। এদিন সকালে নির্দিষ্ট কুমারীকে স্নান করিয়ে নতুন কাপড় পরানো হয়। ফুলের মালা চন্দন ও নানা অলঙ্কার-প্রসাধন উপাচারে সাজানো হয় কুমারীকে। এবারের কুমারী ছিলেন দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলার মনসাপুর গ্রামের পল্লব বিশ্বাস ও লিপি রানী সরকারের মেয়ে শ্রীমতি অপরাজিতা বিশ্বাস রায় (৭+)। সে প্লে শ্রেণেিত লেখাপড়া করে। রামকৃষ্ণ মিশনে পূজার প্রধান পুরোহিত ছিলেন শ্রী সমর রঞ্জন চক্রবর্তী, তন্ত্রধারক ছিলেন স্বামী কল্যানদানন্দ ইমন মহারাজ ও ব্রহ্মচারী গুঞ্জন। অঞ্জলী মন্ত্র পাঠ করান রামকৃষ্ণ মিশন ও আশ্রমের অধ্যক্ষ স্বামী ভক্তিপ্রদা নন্দ মহারাজ।
কুমারীপূজা অনুষ্ঠান দেখার জন্য অগনিত ভক্ত দর্শনাথী সমাগম ঘটে রামকৃষ্ণ মিশনে। পুণ্যার্থীরা কুমারী মায়ের সামনে প্রার্থনায় সমবেত হন এবং পূজারীগণ অশুর শক্তির বিনাশ আর শান্তি, কল্যাণ ও সমৃদ্ধি লাভের জন্য মন্ত্র পাঠের মাধ্যমে মায়ের চরণে পুস্পাঞ্জলী নিবেদন করেন। সকালে অষ্টমী পূজার পর সায়ংকালে অনুষ্ঠিত হয় সন্ধিপূজা। সন্ধ্যার পর আলোর বন্যা বয়ে চলে প্রতিটি পূজা মন্ডপ প্রাঙ্গণে। বিভিন্ন পূজামন্ডপে ঢাকের তালে তালে আরতি নৃত্য, ধূপের ধোঁয়া, ঘণ্টা ধ্বনি ও কাসরের শব্দে পূজা প্রাঙ্গণ হয়ে উঠে উৎসব মুখর। কোথাও কোথাও ধর্মীয় গান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে পূজা উৎসবকে করেছে আরও বেশী নান্দনিক। ময়মনসিংহ শহরের রামকৃষ্ণ মিশন, অলকা নদী বাংলা মন্ডপ, বাংলাদেশে একমাত্র মহিলাদের পরিচালিত শিববাড়ী পূজা মন্ডপ, আঠারবাড়ী বিল্ডিং, গোলপুকুর পাড়, মৃত্যুঞ্চয় স্কুল রোড, দুর্গাবাড়ী, দশভূজা বাড়ী, বড়কালী বাড়ী, ছোট কালীবাড়ী, ভাতৃসংঘ, কবরখানা রোড, মেছুয়া বাজার, জাদব লাহেড়ী লেন, ডাইলপট্রি, জিলপি পট্রি, হিন্দু ধর্মশালা, স্বদেশী বাজার, পুরাতন পুলিশ ক্লাব, পুরুহিত পাড়া, গঙ্গাদাস গুহ রোড, প্রভু জগৎবন্দু আশ্রম, শ্রীশ্রী লোকনাথ মন্দির, দাসপাড়া, কালী বাড়ী বাইলেন, রঘুনাথজিউর আখরা, ছোট বাজার, বড় বাজার, বিশ্বনাথ মন্দির, কেওয়াটখালী বর্মণপাড়া, নটকঘর লেন, হরিজন পল্লী, এসমস্ত পূজা মন্ডপগুলো আকর্ষণীয় করে সাজানো হয়েছে। অষ্টমী পূজা শেষে মন্দিরে মন্দিরে অঞ্জলি প্রদান, প্রসাদ বিতরণ এবং সন্ধ্যার পর জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দর্শনার্থীদের বিপুল জনসমাগম লক্ষনীয়। সন্ধ্যায় মন্ডপে মন্ডপে আলোকসজ্জা ও কোন কোন মন্ডপে আরতি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এবছর ময়মনসিংহ জেলায় ৮১৪টি দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আগামীকাল (৫ অক্টোবর) বুধবার মহাদশমী ও প্রতিমা নিরঞ্জন। এদিকে রামকৃষ্ণ মিশনে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে দিনব্যাপী ফ্রি চিকিৎসা ব্যবস্থা করা হয়।