সকল ধর্মেরই মূলমন্ত্র বা নির্দেশনা একই সুতায় গাথা- মেয়র টিটু


swadeshsangbad প্রকাশের সময় : জানুয়ারী ২০, ২০২৩, ৩:৩১ অপরাহ্ন / ২১৪
সকল ধর্মেরই মূলমন্ত্র বা নির্দেশনা একই সুতায় গাথা- মেয়র টিটু

রঞ্জন মজুমদার শিবুঃ আর্যধর্ম জ্ঞান প্রদায়িনী সভা ধর্মসভা দুর্গাবাড়ী আয়োজিত শ্রীমদ্ভগবদগীতা বিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতায় ও পুরস্কার বিতরণ করা হয়েছে। শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) সকালে নগরীর দুর্গাবাড়ী ও দশভূজা বাড়ী মন্দিরে এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় এবং প্রতিযোগিতা শেষে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ৩ টি বিভাগে ৬ শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ গ্রহণ করেন। পুরস্কারের মধ্যে ছিল ক্রেস্ট, গীতা ও প্রথম পুরস্কার বিজয়ীকে ৫ হাজার টাকা, দ্বিতীয় পুরস্কার বিজয়ীকে ৩ হাজার টাকা ও তৃতীয় পুরস্কার বিজয়ীকে ২ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। চিারক ছিলেন নগরীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৩০ জন শিক্ষক।
উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোঃ ইকরামুল হক টিটু। এসময় তিনি বলেন, সৃষ্টিকর্তার বিধান অনুযায়ী আমরা বিভিন্ন ধর্মের অনুসারী হিসেবে এই পৃথিবীতে জন্ম গ্রহণ করেছি। তিনি যেমন আমাদের সৃষ্টি করেছেন তেমনি আমাদের ভালো রাখার জন্য যুগে যুগে ধর্মগ্রন্থ এবং মহাপুরুষদের বিশ্বে পাঠিয়েছেন। এই ধর্মগ্রন্থগুলো বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখি সকল ধর্মেরই মূলমন্ত্র বা নির্দেশনা একই সুতায় গাথা। সৃষ্টিকর্তা বিভিন্ন ধর্মের মানুষের সম্মিলন ঘটিয়েছেন এই বিশ্বকে সুন্দর করার জন্য। ধর্মকে আমরা যতবেশী জানব তত বেশী সমৃদ্ধ হব। সমাজকে আলোকিত করতে পারব। আর্যধর্ম জ্ঞান প্রদায়িনী সভার আজকের যে আয়োজন তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন। আগামীদিনের প্রজন্মকে সঠিক জ্ঞান বিশেষ করে ধর্মীয় শিক্ষা বা মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ন ভ’মিকা পালন করবে। ধর্মীয় শিক্ষা এবং মূল্যবোধ আমাদের ব্যাক্তিগত, রাষ্ট্রিয়, সামাজিক জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয়। ধর্মীয় গ্রন্থকে আমরা যত বেশী জানব ধর্মীয় মূল্যবোধকে আমাদের হৃদয়ে যত বেশী প্রতিষ্ঠিত করব তাতে আমরা সমাজকে ভালো রাখতে পারব। তিনি আরো বলেন, সমাজে শান্তি শৃংখলা বিনষ্টে কিছু ধর্মীয় অনুসারীরাই কাজ করেন। তাদের ভিতরে ধর্মীয় প্রকৃত শিক্ষা নেই। তারা ধর্ম শিক্ষা সেভাবে রপ্ত করতে পারেনি। আপনি যদি ধর্ম বেশী জানেন তাহলে নিজের ধর্মের পাশাপাশি অন্যের ধর্ম পালনেও সহযোগিতা করবেন। অন্যের ধর্মকে বাধাগ্রস্ত করে নিজের ধর্ম প্রতিষ্ঠা করা যায় না। এটি সৃষ্ঠিকর্তার বিধান নয়। সৃষ্টিকর্তার বিধান যে ধর্মেরই হই না কেন মানুষকে সেবার মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য লাভ করবে। এই শিক্ষাই প্রতিটি ধর্মের মূলমন্ত্র। সুতরাং সেই লক্ষ্যে আমাদের কাজ করতে হবে। মেয়র বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশ একটি সুখি সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক দেশ হবে। সেই লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাজ করছেন। তিনি যেমন মসজিদের জন্য বরাদ্ধ দেন তেমনি মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডার জন্যও বরাদ্দ দেন। তাই আসুন আমরা সকলে মিলে বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন সুখি সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলি।
আর্যধর্ম জ্ঞান প্রদায়িনী সভার সভাপতি প্রফেসর বিমল কান্তি দে এর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক শ্রী শংকর সাহার পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন রেঞ্জ ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য্য। তিনি বলেন, গীতার আর্বিভাব হয়েছিল একটি যুদ্ধক্ষেত্রে ঘোর সংকটময় মুহুর্তে। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গোড় সংকটময় এই মুহুতে আর্বিভুত হয়ে অর্জুনকে গীতার উপদেশ দিয়েছিলেন যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ার জন্য কেননা তখন যুদ্ধ না করলে তার মৃত্যু নিশ্চিত। তখন অর্জুন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা শুনে তার অজ্ঞতা ও মোহ থেকে বের হয়ে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়েছিলেন। তিনি যুদ্ধ করলেন এবং মহাভারতের যত বীর মহারথী ছিলেন তাদেরকে পরাজিত করে যুদ্ধে বিজয় ছিনিয়ে আনলেন। তিনি আরো বলেন, গীতায় বলা হয়েছে তোমার ভিতরে যে শক্তি রয়েছে তা জগ্রত কর। তোমার ভিতরে ঈশ্বর রয়েছেন সেটিকে তুমি বিশ্বাস কর। তুমি ঈশ্বরে ভক্তি রাখ অর্জুনের মত ভক্ত হও অর্জুনের মত বীর হও। আজকে আমরা যারা এখানে এসেছি পুরস্কারের আসায় নয় আমরা এসেছি গীতাকে জানার জন্য। তিনি আরো বলেন, আমরা প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠতে পারিনি। আমাদের পরিবার থেকে প্রকৃত ধর্মীয় শিক্ষা দেয়া হয়নি। এট হচ্ছে আমাদের দুর্ভাগ্য। আমরা যদি সবাই ভালো থাকি দেশ ভালো থাকবে। আমরা সবাই মিলে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলি। বর্তমান সরকার প্রধান মানণীয় প্রধানমন্ত্রী ব্যাক্তিগত ভাবে অত্যন্ত অসাম্প্রদায়িক মানুষ। তিনি সকলের মিলিত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশকে গড়তে চান। আসুন আমরা সবাই মিলে একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তুলি।
বিশেষ অতিথি জেলা প্রশাসক মোঃ মোস্তাফিজার রহমান বলেন, প্রত্যেক ধমেরই মূল কথা শান্তি। আমরা ধর্মের বাণী অনুসরণ করব। তাহলে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা সম্ভব। অনুষ্ঠানে সন্মানিত অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) পুলক কান্তি চক্রবর্তী, জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি এডভোকেট বিকাশ রায়, সাধারণ সম্পাদক ডাঃ সুজিত বর্মন, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি এডভোকেট রাখাল চন্দ্র সরকার, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ মহানগর শাখার সভাপতি এডভোকেট প্রশান্ত কুমার দাস চন্দন, সাধারণ সম্পাদক শ্রী পবিত্র রঞ্জন রায়, ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্রী অমিত রায়, পূজা উদযাপন পরিষদ মহানগর শাখার সভাপতি এডভোকেট তপন দে, রামকৃষ্ণ মিশন ও আশ্রমের শ্রী স্বামী কল্যাননন্দজী ইমন মহারাজ, প্রান্ত স্পেশালাইজড হসপিটাল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনসুর আলম চন্দন, এডভোকেট অশোক কুমার ঘোষ, অধ্যাপক জুয়েল রায় চৌধুরী, শ্রী কেশব চক্রবর্তী।
এসময় শিক্ষক, শিক্ষর্থী, অভিবাবক, প্রশাসনের কর্মকর্তা সহ সনাতন ধমর্অলম্বী নারী পুরুষ উপস্থিত ছিলেন।