বিদেশফেরতদের নিয়ে ব্র্যাকের মানবিক কাজে সরকারি দপ্তর ও জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত রাখার আহবান ভালুকায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা


swadesh sangbad প্রকাশের সময় : মে ২১, ২০২৪, ৩:৪৪ অপরাহ্ন / ১৫৭
বিদেশফেরতদের নিয়ে ব্র্যাকের মানবিক কাজে সরকারি দপ্তর ও জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত রাখার আহবান ভালুকায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা

স্টাফ রিপোর্টার : প্রবাসীরা বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় চালিকাশক্তি। কাজেই অভিবাসনকে যেমন নিরাপদ করতে হবে তেমনি বিদেশফেরত মানুষের পাশেও দাঁড়াতে হবে। বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম সেই কাজগুলো করার চেষ্টা করছে। ময়মনসিংহ বা দেশের যে কোন জেলায় বিদেশ থেকে ফিরে আসা মানুষ ব্র্যাকের প্রত্যাশা-২ প্রকল্প থেকে মনোসামাজিক কাউন্সেলিং, সামাজিক ও অর্থনৈতিক পুনরেকত্রীকরণে সহায়তা পাবেন। ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলায় অনুষ্ঠিত উপজেলা কর্মশালায় উপজেলা প্রশাসনসহ সরকারের নানা দপ্তরও তাদের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সোমবার (২০মে ২০২৪ ইং), ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের উদ্যোগে ভালুকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত “নিরাপদ অভিবাসন ও বিদেশ ফেরতদের পুনরেকত্রীকরণ” শীর্ষক উপজেলা কর্মশালায় এই আলোচনা হয়। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ভালুকা উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলিনূর খান।
স্বাগত বক্তব্যে ময়মনসিংহের ব্র্যাক জেলা সমন্বয়কারী জাহাঙ্গীর আলম সবাইকে ব্র্যাকের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানিয়ে ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের পরিচয় সংক্ষেপে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় বাংলাদেশ আজ স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত হচ্ছে। এই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে যাদের অবদান অস্বীকার্য, তাদের মধ্যে অন্যতম হলো আমাদের প্রবাসী ভাই ও বোনেরা। তাদের পাঠানো রেমিটেন্স বাংলাদেশের অন্যতম চালিকাশক্তি। বিদেশফেরত অভিবাসীদের জন্যই ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রত্যাশা-২ প্রকল্প কাজ করে আসছে। এই প্রকল্প যাতে ভালুকা উপজেলায় সফলভাবে কাজ করতে পারে সেজন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
এমআরএসসি কোঅর্ডিনেটর মোঃ নাসিম উদ্দিন কর্মশালার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। প্রোগ্রাম কিভাবে একজন বিদেশ ফেরত অভিবাসীকে সহায়তা করে তার বাস্তব রূপরেখা তুলে ধরা হয় এই উপস্থাপনায়।

উপজেলার মল্লিকবাড়ি ইউনিয়নের সৌদি আরব ফেরত অভিবাসী লাকি আক্তার তার বিদেশ যাওয়ার গল্প বলতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পরেন। তিনি তার অশ্রুসিক্ত নয়নে বিদেশ যাওয়ার গল্প এবং সেখানকার নির্মম বাস্তবতার কথা বলেন। দুই মাস অবস্থান করে বেতনের বদলে জুটে অমানবিক নির্যাতন। এরপর অসুস্থ হয়ে গেলে শূন্য হাতে বাংলাদেশে ফেরত আসেন তিনি।
এরপর উম্মুক্ত আলোচনায় প্রায় সকলেই অংশ নেন। নানান রকম প্রশ্ন-উত্তর এবং পরামর্শের মাধ্যমে প্রত্যাশা-২ প্রকল্পের আরো বিস্তরিত উঠে আসে এই সেশনে।
উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এবং যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা ব্র্যাকের এই প্রকল্পে বিদেশফেরতদের প্রশিক্ষণ করানোর মাধ্যমে পাশে থাকবেন বলে জানিয়েছেন।
কর্মশালায় ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের ময়মনসিংহ এমআরএসসির সাইকোসোশ্যাল কাউন্সিলর শেখ হাবিবা আমজাদ এবং ভালুকা উপজেলার প্রোগ্রাম অর্গানাইজার রফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। আরো উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, সাংবাদিক, শিক্ষক, ইমাম, পুরোহিত, বিদেশফেরত অভিবাসীসহ নানান শ্রেণীর মানুষ।
সভাপতির বক্তব্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলিনূর খান বলেন, ব্র্যাক যে বিদেশ ফেরত অভিবাসী নিয়ে কাজ করছে তা আসলেই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা চাই বরাবরের মত ব্র্যাক তাদের কাজের স্বচ্ছতা বজায় রাখবে। তিনি বলেন, সমাজে নিরাপদ অভিবাসন নিয়ে কাজ করার অনেক জায়গা রয়েছে। একই সাথে বিদেশফেরত অভিবাসীদেরকে বিশেষকরে নারী অভিবাসীদেরকে সমাজ এখনো সুন্দরভাবে গ্রহণ করতে পারে না। এইসকল ক্ষতিগ্রস্ত বিদেশফেরতদের জন্য অনেক কাজ করার সুযোগ রয়েছে। এমন অবস্থায় ব্র্যাকের যে সেবা গুলো রয়েছে তা পেলে একজন মানুষ ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বলে তিনি আশা করেন। তিনি আরো বলেন, আজকের এই কর্মশালায় ব্র্যাকের প্রত্যাশা-২ প্রকল্প সম্পর্কে আমাদের সকলের যা জানার ছিল, আশা করছি তা আমরা জানতে পেরেছি। সর্বশেষে তিনি ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রকল্পের এসকল কর্মকান্ডে সরকারি নানান দপ্তর এবং জনপ্রতিনিধিদের বেশি করে সম্পৃক্ত রাখার আহবান জানান এবং উপস্থিত সকলকে ও ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে সভার সমাপ্তি ঘোষনা করেন।

উল্লেখ্য-বিদেশ—ফেরত বাংলাদেশিরা যেন দেশে এসে ফের ঘুরে দাঁড়াতে পারেন সেজন্য অনেকদিন ধরে কাজ করছে ব্র্যাক। ২০১৭ থেকে ২০২২ এই সময়ে প্রত্যাশার প্রথম ধাপ বাস্তবায়ন শেষে এখন দ্বিতীয় ধাপের কাজ শুরু হয়েছে। এর আওতায় অন্তত ১০ হাজার মানুষ বিমানবন্দরে সহায়তা পাবেন। পাশাপাশি সাত হাজার ৭০০ জন বিদেশফেরত মানুষ যেন ফের দেশে আয় করতে পারেন সেজন্য তাদেরকে ধাপে ধাপে সহায়তা করা হবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ব্র্যাকের যৌথ অর্থায়নে ইম্প্রুভড সাসটেইনেবল রিইন্ট্রিগ্রেশন অব বাংলাদেশি রিটার্নি মাইগ্রেন্টস (প্রত্যাশা-২) প্রকল্পটি বাস্তবাযয়ত হচ্ছে।

বিশ্বের সর্ববৃহৎ উন্নয়ন সংস্থা এবং সারাবিশ্বের শীর্ষস্থানীয় এনজিও— ব্র্যাক, ১৯৭২ সালের প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে দেশে ও দেশের বাইরে নানাবিধ কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। ব্র্যাকের বিভিন্ন কর্মসূচিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি কর্মসূচি হল মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম। ব্র্যাকের এই প্রোগ্রাম ২০০৬ সাল থেকে দেশের অভিবাসনপ্রবণ জেলাসমূহে বিদেশগামী নারী ও পুরুষের মাঝে সঠিক তথ্যের মাধ্যমে নিরাপদ অভিবাসন বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম, বিদেশফেরতদের পুনরেকত্রীকরণ, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, অভিবাসন খাতে অ্যাডভোকেসি ও নানাবিধ সহযোগিতামূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছে।