স্টাফ রিপোর্টার ঃ জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধে জি-৭ নেতৃবৃন্দের প্রতি ময়মনসিংহের নাগরিক সমাজের দাবী আগামী ১৩-১৫ জুন ২০২৪ ই তারিখে অনুষ্ঠিতব্য জি-৭ শীর্ষ সম্মেলন কে সামনে রেখে ময়মনসিংহের সচেতন নাগরিক সমাজের উদ্যোগে জীবাশ্ম জ্বালানিতে গ্রুপের সদস্য দেশগুলোর চলমান বিনিয়োগের বিরুদ্ধে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগের দাবীতে ১১ জুন মঙ্গলবার ময়মনসিংহ শহরের টাউন হল প্রাঙ্গণে এক বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মাটি বাংলাদেশ, উপকূলীয় জীবন যাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোট (CLEAN), , বাংলাদেশ ওয়ার্কিং গ্রুপ অন ইকোলজি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ইডএঊউ) এবং ক্লাইমেট চেঞ্জ নেটওয়ার্ক ইন গ্রেটার ময়মনসিংহ (সিসিএনজিএম)- এর যৌথ উদ্যোগে এই বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে দাবী নামা উত্থাপন কালে মাটি বাংলাদেশের উন্নয়ন পরিচালক মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, “বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে জলবায়ু পরিবর্তন এখন বিশ্বব্যাপী নতুন বাস্তবতা যা আমাদের পৃথিবী তথা মানবজাতি সহ গোটা জীবজগতের অস্তিত্বকে সংকটাপন্ন করে তুলেছে। জি-৭ ভুক্ত দেশগুলো বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য দায়ী জীবাশ্ম জ্বালানী উৎপাদনে ২৭% অবদান রাখে এবং বিভিন্ন দেশে জীবাশ্ম জ্বালানী অবকাঠামোতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে চলেছে। ২০২৩ থেকে ২০৫০ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং কানাডা নতুন তেল ও গ্যাস প্রকল্প থেকে প্রায় অর্ধেক কার্বনডাই অক্সাইড নির্গমনের জন্য দায়ী হতে যাচ্ছে। অথচ তারা বিগত জলবায়ু সম্মেলন (কপ-২৮)-সহ পূর্বে বহুবার সুষ্পষ্ট প্রতিশ্রুতি দেওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশগুলোতে জীবাশ্ম জ্বালানী ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঋণ আকারে অর্থায়ন অব্যাহত রেখে চলেছে”।
‘পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন আন্দোলন’র সাধারণ সম্পাদক এড. শিব্বির আহমেদ লিটন বলেন, “তথ্য অনুযায়ী জি-৭ ভুক্তদেশগুলো জীবাশ্ম জ্বালানী ভিত্তিক প্রকল্পের জন্য বার্ষিক ২৫.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করে যেখানে নবায়নয়োগ্য জ্বলালানিতে বিনিয়োগ করে মাত্র ১০.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে তাদের বিনিয়োগের মাত্র ১% স্বল্প আয়ের দেশগুলোতে যায় তাও আবার ঋণ আকারে যা এসব দেশের বৈদেশিক ঋণের বোঝা আরও বাড়িয়ে তুলে। অথচ বিশ্বের সর্বাধিক কার্বন নিঃসরনকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের মত ক্ষতিগগ্রস্তদেশগুলোকে তারা ক্ষতিপূরণ দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।” তিনি তাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে জি-৭ নেতৃবৃন্দের প্রতি জোড় দাবী জানান।
‘বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সেন্টার’, ময়মনসিংহ জেলা কমিটির সভাপতি মাহবুব বিন সাইফ বলেন, ইতিমধ্যে জি-৭ ভুক্ত দেশগুলি জ্বালানি খাতের জন্য ২০৫০সালের মধ্যে আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থা (IEA) কর্তৃক ঘোষিত শূণ্য-নির্গমণ লক্ষমাত্রার সাথে সামঞ্জস্য রেখে ২০৩৫ সালের মধ্যে কয়লা-চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেছে। অথচ জি৭ দেশগুলির অন্যতম জাপান উন্নততর প্রযুক্তির নামে মূলত কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে ঋণ সহায়তা দিচ্ছে যা ব্যয়বহুল ও পরিবেশের জন্য ভয়াবহ ক্ষতিকর”। তিনি এসব প্রকল্প বন্ধের জোড় দাবী জানান।
‘ময়মনসিংহ জেলা নাগরিক আন্দোলনে’র সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী নূরুল আমিন কালাম বলেন, “কার্বন নিঃসরণ এবং বৈশ্বিক তাপমাত্রা হ্রাস করণে জি-৭ ভুক্ত দেশগুলোর ভূমিকা সর্বাধিক। কিন্তু তারা বারংবার প্রতিশ্রুতি দেওয়া সত্ত্বেও তা রক্ষা করছে না। এজন্য বিশ্বব্যাপি সচেতন মহলের সোচ্চার হওয়ার কোন বিকল্প নেই। তিনি ময়মনসিংহসহ সারাদেশের এবং বিশ্বের নাগরিক সমাজকে এ ব্যাপারে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানান এবং জি-৭ নেতৃবৃন্দের প্রতি জীবাশ্ম জ্বলানি আসক্তি থেকে বেরিয়ে এসে আমাদের ভবিষ্যৎ জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নবায়ন যোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগের জোড় দাবী জানান”।
সমাবেশে সিসিএনজিএম নেটওয়ার্কের সদস্য সংস্থা সমূহের প্রতিনিধিসহ, ছাত্র-ছাত্রী, বিভিন্ন পেশাজীবী এবং সচেতন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি বৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
আপনার মতামত লিখুন :