স্টাফ রিপোর্টার ঃ বিপদে পড়ে যাওয়া বিদেশ-ফেরতদের পাশে থাকতে হবে। প্রবাসীরা বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় চালিকাশক্তি। কাজেই অভিবাসনকে যেমন নিরাপদ করতে হবে তেমনি বিদেশ-ফেরত মানুষের পাশেও দাঁড়াতে হবে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম সেই কাজগুলো করার চেষ্টা করছে। ময়মনসিংহ বা দেশের যে কোন জেলায় বিদেশ থেকে ফিরে আসা মানুষ ব্র্যাকের প্রত্যাশা-২ প্রকল্প থেকে মনোসামাজিক কাউন্সেলিং, সামাজিক ও অর্থনৈতিক পুনরেকত্রীকরণে সহায়তা পাচ্ছেন। ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলায় অনুষ্ঠিত উপজেলা কর্মশালায় উপজেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে সরকারের নানা দপ্তরও তাদের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
বুধবার (০৬ নভেম্বর) ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রেগ্রামের উদ্যোগে ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলা পরিষদ হলরুমে আয়োজিত “নিরাপদ অভিবাসন ও বিদেশ-ফেরতদের পুনরেকত্রীকরণ” শীর্ষক উপজেলা কর্মশালায় এই আলোচনা হয়।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন গফরগাঁওয়ের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবাইয়া ইয়াসমিন।
সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, “ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম বর্তমানে প্রত্যাশা-২ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে গফরগাঁওয়ের মানুষ বিদেশে অনিরাপদভাবে যাবার করুণ পরিণতি সম্পর্কে জানতে পারছে, সচেতন হচ্ছে। পাশাপাশি বিদেশ-ফেরত ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলোর পুনরেকত্রীকরণের জন্য সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ব্র্যাক। আমরা সবাই মিলে বিপদে পড়া বিদেশ-ফেরতদের পাশে থাকবো।” নিজ বক্তব্যে তিনি বিদেশে যাওয়ার আগে সেই দেশের ভাষা শিক্ষা ও দক্ষ হয়ে বিদেশ যাওয়ার ওপরে গুরুত্বারোপ করেন।
অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের ময়মনসিংহ এমআরএসসির সেক্টর স্পেশালিস্ট ইকোনমিক রিইন্টিগ্রেশন নাহিন রহমান। কর্মশালার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এমআরএসসি কো-অর্ডিনেটর মোঃ নাসিম উদ্দিন। অনুষ্ঠানে গফরগাঁও উপজেলার সালটিয়া ইউনিয়নের সৌদি আরব ফেরত অভিবাসী বিলকিস এবং ইকবাল নিজেদের বিদেশে যাওয়ার এবং সেখানে প্রতারণার শিকার হয়ে অসহনীয় জীবন যাপনের অভিজ্ঞতা উপস্থিত অংশীজনদের বর্ণনা করেন।
অনুষ্ঠানে গফরগাঁও উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাসহ উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, সাংবাদিক, শিক্ষক, খতিব, পুরোহিত, বিদেশফেরত অভিবাসীসহ নানা শ্রেণির মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, বিদেশ-ফেরত বাংলাদেশিরা যেন দেশে এসে ফের ঘুরে দাঁড়াতে পারেন সেজন্য দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে ব্র্যাক। ২০১৭ থেকে ২০২২ এই সময়ে প্রত্যাশার প্রথম ধাপ বাস্তবায়ন শেষে এখন দ্বিতীয় ধাপের কাজ চলছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ব্র্যাকের যৌথ অর্থায়নে ইম্প্রুভড সাসটেইনেবল রিইন্ট্রিগ্রেশন অব বাংলাদেশি রিটার্নি মাইগ্রেন্টস (প্রত্যাশা-২) প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ প্রকল্পের আওতায় অন্তত: ১০ হাজার জন মানুষ বিমানবন্দরে সহায়তা পাবেন। পাশাপাশি সাত হাজার ৭০০ জন বিদেশ ফেরত মানুষ যেন ফের দেশে আয় করতে পারেন সেজন্য তাদেরকে ধাপে ধাপে সহায়তা করা হবে।
বিশ্বের সর্ববৃহৎ উন্নয়ন সংস্থা এবং সারাবিশ্বের শীর্ষস্থানীয় এনজিও— ব্র্যাক, ১৯৭২ সালের প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে দেশে ও দেশের বাইরে নানাবিধ কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। ব্র্যাকের বিভিন্ন কর্মসূচিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি কর্মসূচি হল মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম। ব্র্যাকের এই প্রোগ্রাম ২০০৬ সাল থেকে দেশের অভিবাসনপ্রবণ জেলাসমূহে বিদেশগামী নারী ও পুরুষের মাঝে সঠিক তথ্যের মাধ্যমে নিরাপদ অভিবাসন বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম, বিদেশ ফেরতদের পুনরেকত্রীকরণ, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, অভিবাসন খাতে অ্যাডভোকেসি ও নানাবিধ সহযোগিতামূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছে।
আপনার মতামত লিখুন :